রংপুরে অসময়ের ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (গত শনিবার বেলা ১২টা থেকে গতকাল রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত) রংপুর বিভাগে ১ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে, ৪১৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার। আর শুধু রংপুরে ১৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে আশ্বিনেই ঝুম বৃষ্টিতে রংপুর অঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আবার কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। টানা বৃষ্টিতে রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। সড়কে যানবাহন চলাচল কিছুটা কমেছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে অনেক মার্কেটে খোলা হয়নি দোকানপাট। এদিকে কাজের আকালে বিপাকে রয়েছেন দিনমজুর ও শ্রমিকরা। নতুন ধান রোপণ করা কৃষকদেরও কপালে পড়েছে চিন্তায় ভাঁজ। রংপুর নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রবাহপ্রাণ শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খাল। এই দুই খাল গেল কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে এখন অনেকটাই টইটম্বুর। অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতায় অপ্রস্তুত এক বিড়ম্বনায় পড়েছে এই জনপদের মানুষ। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের মতো শহর ডুবে যাবার আশঙ্কা চেপে বসেছে অনেকের মনে। তবে আষাঢ়-শ্রাবণকে হার মানানো অসময়ের এই অবিরাম বৃষ্টিপাতে নদীপাড়েও আবার বন্যার শঙ্কা জেগেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর লালবাগ, খামার মোড়, নেসকো গেট, নূরপুর, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, নিউ জুম্মাপাড়া, পূর্ব জুম্মাপাড়া, তাজহাট, বাবুপাড়া, মহাদেবপুর, কামারপাড়া, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, দর্শনা, আশরতপুর, ধাপ এলাকা, মুন্সিপাড়া, হনুমানতলা, মুলাটোল, মেডিকেল পাকার মাথা ও জলকরসহ বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রংপুর প্রেসক্লাব এলাকায় কথা হয় পত্রিকা বিক্রেতা মনজু মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে পত্রিকা বিলি করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ও ঢাকার পত্রিকাগুলো হাতে থাকলেও পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারিনি। প্রেসক্লাব বিপণী বিতান মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বিগত এক শতাব্দীতে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই। নীলফামারীর সৈয়দপুরের মোতালেব হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে ভারি বর্ষণের কারণে সৈয়দপুরের নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। শহরের মিস্ত্রিপাড়া, মুন্সিপাড়া, হাওয়ালপাড়া, রসুলপুর, ইসলামবাগ, গোলাহাট এলাকার কিছু বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে বলেও জানান তিনি। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে হওয়া ১ হাজার ৩০০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ৪১৫.৪ মিলিমিটার এবং রংপুরে ১৬২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে ৩১৮.৪ মিলিমিটার, নীলফামারী ডিমলায় ২০৪.৭, পঞ্চগড়ে ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আরো দুই দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, এখন ধানের মৌসুম। এই বৃষ্টি ধানের জন্য খুবই উপকারী। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সবজিখেতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, যা পানি নেমে যাওয়ার পর বোঝা যাবে।