নারায়ণগঞ্জে কারাবন্দিদের তৈরি পোশাক বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  করীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ কারাগারের বন্দিদের গত ৬ বছর ধরে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে কারা অভ্যন্তরের মিনি গার্মেন্ট রিজিলিয়ান্স। এতে কাজ করে উপার্জিত অর্থ যেমন পরিবারের কাছেও পাঠাতে পারছেন। তেমনি রিজিলিয়ান্সে কাজ শিখে অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছেন। বন্দিদের অন্ধকার জগৎ থেকে যেন আলোর পথে নিয়ে আসার অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে মিনি গার্মেন্টটি। বন্দিদের তৈরি পোশাক বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দিরা যাতে বন্দিজীবন শেষে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এটাই বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার লক্ষ্য। সে লক্ষ্যেই নারায়ণগঞ্জ কারাগারে মিনি গার্মেন্ট রিজিলিয়ান্স স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৩০ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দি প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং মিনি গার্মেন্ট ‘রিজিলিয়ান্স’ এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এরপর কারা অভ্যন্তরে শুরু হয় মিনি গার্মেন্ট নির্মাণের কাজ। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর কারা অভ্যন্তরের মিনি গার্মেন্টটি উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। কারা অভ্যন্তরে ৫ হাজার বর্গফুটের মিনি গার্মেন্টটি কারা অধিদপ্তর, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে। এতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ৫৪টি মেশিন স্থাপন করা হয়। মেশিনগুলোর মধ্যে রয়েছে সুইং, ওভারলক, অ্যামব্রয়ডারি। এছাড়াও মিনি গার্মেন্টটিতে প্রতি শিফটে অন্তত ৭০ থেকে ৭৫ জন কারাবন্দি কাজ করছে। বিভিন্ন গার্মেন্ট ও বায়ার থেকে অর্ডার সংগ্রহ করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বিদেশি বায়ারের অর্ডারও পাওয়া যাচ্ছে। মিনি গার্মেন্ট রিজিলিয়ান্সে অদ্যাবধি পোলো শার্ট, টিশার্ট, ট্রাউজার ও মাস্ক তৈরি হয়েছে। কারাবন্দিদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হয়েছে। রিজিলিয়ান্সে এই ৬ বছরে ২২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০০ টাকা আয় হয়েছে যার মধ্যে ৫০ ভাগ অর্থ বন্দিদের প্রদান করা হয়েছে। যেসব কারাবন্দি এই মিনি গার্মেন্টে কাজ করছে তাদের নামে পৃথক একাউন্টে লভ্যাংশের ৫০ ভাগ থেকে প্রাপ্ত অর্থ পিসির জমা করা হচ্ছে। সেই জমাকৃত অর্থ তারা বাড়িতেও পাঠাতে পারছেন নয়তো জেল থেকে বের হওয়ার সময় এককালীন সঙ্গে নিয়ে যেতে পারছেন।

পাশাপাশি মিনি গার্মেন্টে কাজ করে বন্দিরা যেমন সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেন তেমনি স্বাবলম্বী হওয়ার পথও খুঁজে পাচ্ছেন। কারামুক্ত হয়ে অনেকেই কোনো গার্মেন্টে কাজ করছেন নয়তো নিজেরা মিনি গার্মেন্ট বা হোসিয়ারি কারখানা গড়ে ব্যবসা করছেন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন জানান, মিনি গার্মেন্ট রিজিলিয়ান্সে যেসব বন্দিরা কাজ করেছেন তাদের অনেকেই কারামুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এছাড়া প্রতিমাসেই পরিবারের কাছে উপার্জিত অর্থ পাঠাতে পারছেন। মিনি গার্মেন্টে তৈরি পোশাক বিদেশেও রপ্তানি হয়েছে। অদ্যাবধি ১১ লক্ষাধিক টাকা কর্মরত বন্দিদের পিসির মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।