রাজধানীতে হাঁটার চেয়ে পরিবহণের গতি কম
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
যানজটে প্রতিদিন মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে করে কাজের যেমন ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে গোটা জীবনের বড় একটা অংশ। বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার সড়কে পিক টাইমে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি হচ্ছে ৪.৮ কিলোমিটার। যা একজন সাধারণ মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। ২ বছর আগেও এই গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। কারণ একজন সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটলে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে যেতে পারে। ফলে একজন মানুষ ইচ্ছে করলে হেঁটেই গাড়ির আগে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।
স্বাভাবিক মনে হলেও বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। পরিবহনের ধীরগতির ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। রাজধানীর পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি)।
সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানবাহনের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে। বর্তমানেই তার দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। সঠিক ও পরিকল্পিতভাবে সড়কে উন্নয়ন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হবে। গণপরিবহনের করুণ অবস্থার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা সড়কের সক্ষমতার চেয়ে গাড়ির পরিমাণ বেশিকে দায়ী করছেন। যেখানে অধিকাংশ হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের ১১ ভাগের এক ভাগ। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ছিল তিন মিলিয়ন এবং ২০১৮ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ মিলিয়নের বেশি। ১৯৮০ সালে গাড়ির গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার এবং এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারেরও কম। এতে যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ২০৩৫ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ মিলিয়নে। ফলে যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না গেলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে যানজট।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সড়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংগঠন যারা আছেন তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। রাস্তা তৈরি করছে সিটি কর্পোরেশন আর গাড়ির নিবন্ধন দিচ্ছে বিআরটিএ। গাড়ি আমদানির অনুমতি দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ এদের কাজের মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় নেই। সিঙ্গাপুরের ৭০ শতাংশ যানবাহন রাস্তায় নামায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এখনো ৩০ শতাংশ রাস্তা ফাঁকা রেখেছে দেশটি। তারা একটি নতুন গাড়ি নিবন্ধন দিতে পুরাতন একটি গাড়িকে বাদ দেয়া হয় এই নিয়ম রক্ষা করে। নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ফুটপাতবান্ধব ঢাকা শহর কখনো হতে পারেনি।
তাছাড়া ফুটপাত দিয়েও মানুষ ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। আর রাস্তায় গাড়ি চলার মতো অবস্থাও নেই। গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে সব কিছু সাধারণ রয়ে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির অবারিত ব্যবস্থার ফলে আজকের এই অবস্থা। মেট্রোরেলের সবগুলো রুট চালু হলে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ চলাচল করতে পারবে। আমরা এখনো গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে সড়ক তৈরি করতে পারিনি। গণপরিবহনগুলোতে ঠিকমতো মানুষ চলতে পারে না। ৮০ শতাংশ মানুষ গণপরিবহনে ভরসা করে চলাচল করে।