ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তিন-চতুর্থাংশ স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে শেষ পর্যায়ে

তিন-চতুর্থাংশ স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে শেষ পর্যায়ে

বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যান্সার। এরই মধ্যে নারীদের স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ ও মৃত্যু বেড়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর মারা যায় প্রায় ৮ হাজার। এর কারণ হিসেবে সঠিক সময়ে ক্যান্সার শনাক্ত না হওয়াকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশে তিন-চতুর্থাংশ স্তন ক্যান্সার শেষ পর্যায়ে ধরা পরে বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানানো হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকা, নীরব ঘাতক স্তন ক্যান্সার।

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

মারা যায় প্রায় ৮ হাজার নারী। অর্থাৎ আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সচেতনতার ঘাটতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। বিশেষত নারীদের সংকোচবোধের কারণে দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান। বাংলাদেশে সার্বিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসাব্যবস্থাও অপ্রতুল। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের কোনো জাতীয় কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেই। লক্ষণ না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের সহজ ও ব্যথা কষ্টবিহীন পদ্ধতি প্রযোগ করে গোপন থাকা ক্যান্সার নির্ণয় করাকে ক্যান্সার স্ক্রিনিং বলা হয়।

স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে ও সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে শতকরা ৯০ ভাগ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। দুঃখের বিষয়, আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে থাকায় তিন-চতুর্থাংশ রোগী ধরা পড়ে রোগের শেষ পর্যায়ে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রখ্যাত স্বাস্থ্যবিষয় লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে সব থেকে পিছিয়ে আছে ক্যান্সার। এ খাতে আমাদের অগ্রগতি হয়নি। ফলে অনেক মানুষ ক্যান্সার চিকিৎসায় মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। সারাবিশ্বে ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেকদূর এগিয়েছে। ফলে এখন আর ক্যান্সার হলেই মৃত্যু এমন নয়। সঠিক সময়ে স্ক্রিনিং করা গেলে ৯০ শতাংশ ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শুধু ভ্যাকসিন করেও অনেকগুলো ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকা যায়। এ সময় তিনি নিজে একজন ক্যান্সার সারভাইভার বলে জানান প্রখ্যাত এই চিকিৎসক।

জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, মানুষকে সচেতন করাটা জরুরি। রোগ যেন না হয়, এই চেষ্টা করতে হবে। এটি একদম স্কুল পর্যায়ে শুরু হতে হবে।

আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি এসেছে। একইসঙ্গে ক্যান্সারের বিষয়ও পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করতে হবে। সক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয়-বহুল, সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন একটি ফান্ড গঠনের মাধ্যমে এসব রোগীকে সহযোগিতা করা। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আক্তার বলেন, বছরে ১৫ হাজার মা সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। ১৮ বছরের আগে ৫০ শতাংশের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

এর অর্ধেক আবার ১৮-এর আগেই সন্তান জন্মদান করছে। এটি হচ্ছে কারণ সমাজে নারীরা তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি পাঁচ হাজারে একজনের স্তন ক্যান্সার পাওয়া যাচ্ছে। এর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

কেন আর কীভাবে ক্যান্সার হয় নারীদের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের জানতে হবে ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। এই সচেতনতাটুকু মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। এ সময় ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন আগামী ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত