রূপবান শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মহি উদ্দিন (৩৫)। একদিনেই ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। শিম বিক্রি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আগামী ২ মাসে আরো ৪ লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন তিনি। মহি উদ্দিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যম বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। মহি উদ্দিন বলেন, ‘প্রথমে সমতলে বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেছি।
পাশাপাশি কাঠের ও সাজনার ব্যবসা করেছি। এলাকার জমিগুলো বিভিন্ন শিল্প-মালিক কিনে নিয়েছেন। এখন ফসলি জমি নেই বললেই চলে। তাই ৩ বছর আগে কয়েকজনের পরামর্শে পাহাড়ে চাষাবাদ শুরু করেছি। এবার প্রায় ২৫০ শতক জায়গাজুড়ে রূপবান শিমের চাষ করেছি। এছাড়া লাউ, বরবটি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এক বাজারে ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছি। প্রতি কেজি শিম প্রথম প্রথম পাইকারি ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন অবশ্য ১৩০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করছি। আমার শিম বাজারে মোবাইল ফোনে বিক্রি হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের বড় বড় পাইকাররা খবর নিয়ে পাহাড়ের গোড়ায় এসে অপেক্ষা করেন। পরে তা ট্রাকে করে নিয়ে যান।’ মহি উদ্দিন আরো বলেন, ‘আমার খেতে ১২ মাসই তিনজন লোক নিয়েজিত থাকে। তিনজনের মাসে বেতন ২০ হাজার করে। এছাড়া শিম তোলা ও পরিচর্যার কাজে কখনো ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করে। পাহাড়ে চাষ করলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেশি পড়ে। গত বছর সব খরচ বাদ দিয়ে রূপবান শিম বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।’ উপজেলা কৃষি অফিস ও একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপবান শিম ওঠার শুরুতে তারা প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি করেছেন ১৬০-১৭০ টাকা দরে। এখনো ১৩০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হাওয়ায় এর উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। চলতি বছর সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৭৫ একর জমিতে রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে। চাষ করেছেন প্রায় ৩০০ কৃষক। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে রূপবান শিম চাষ করা হয়। ৬০ দিনের মাথায় ফসল উত্তোলন শুরু হয়। এভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত শিম বিক্রি হয়। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, ‘বাঁশবাড়িয়ার সবচেয়ে পরিশ্রমী কৃষক মহিউদ্দিন। চলতি মৌসুমে তিনি ১ বাজারে ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। পাহাড় থেকে শিমগুলো তুলে নিচে আনতে ৩ দিন লেগেছে। সমতলে আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। শিল্প-মালিকরা এসব জমি কিনে নিচ্ছেন। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে পাহাড়ে চাষ করছেন।