আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বেড়েই চলেছে রোগী সংখ্যা। ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে এ হাসপাতালে। এরইমধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। এছাড়া কলেরা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর-ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শত শত মানুষ।
ফলে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। সেবা নিশ্চিতে হাসপাতালে ইন্টার্ন নার্স বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে সেবা পাচ্ছেন অন্তত ২০ জেলার মানুষ। ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য বর্তমানে ৬০টি ওয়ার্ডে রয়েছে দেড় হাজার শয্যা। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালটিতে। শয্যা না পেয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা এমনকি প্রবেশপথের সামনেই থাকতে হচ্ছে রোগীদের। মেঝেতে কোনোরকম কাঁথা-কম্বল ফেলে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষারত তারা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের। সূত্র জানায়, গত জুলাই মাস থেকে রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি শুরু হয়। সম্প্রতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। রামেক হাসপাতালে প্রতিদিন কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে মোট ২২ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০৮ জন ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালের ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৭, ২৫, ৩০, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪০, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন করে ডেঙ্গু পজিটিভ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে (রাজশাহী) ২ হাজার ২৫৪ জন রোগী।
বাকিরা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে আক্রান্ত হন। মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩ হাজার ১৯৯ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দুজন। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, শুধু ডেঙ্গু রোগী নয়, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত শারীরিক জটিলতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে কলেরা রোগীর সংখ্যা থাকে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন, সেখানে এ সময়ে ১ হাজার ৭৯৩ রোগী ভর্তি আছেন। অর্থাৎ অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি। আর ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন ১ হাজার ৭২১ জন। এটা গত ২০ অক্টোবর পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা। তথ্যমতে, ওয়ার্ডে রোগীর প্রাথমিক বিবরণ শুনে প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন ও ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ওয়ার্ডে নার্স সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় রোগী ভর্তি পর চিকিৎসা শুরু হতে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয়। সেক্ষেত্রে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের সহযোগিতা করেন ইন্টার্ন নার্সরা। এতে তারাও হাতেকলমে শেখার সুযোগ পান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে হাসপাতালটিতে বেসরকারি নার্সিং কলেজের বিএসসি-ইন-নার্সিং কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিস বন্ধ রাখা হয়েছে। রোগীর স্বজনরা জানান, ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যায় না। নার্স সংখ্যা রোগীর তুলনায় অনেক কম। এতে নার্সরা চাপে পড়েন, তারাও সেবা থেকে বঞ্চিত হন। সঠিক সময়ে ওষুধপত্র না পেয়ে অনেকের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হয়ে যায়। প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হয়। সেখানে পাওয়া যায় না শয্যা। চেয়ে চেয়ে স্বজনের মৃত্যু দেখা ছাড়া উপায় থাকে না তাদের। যে কারণে ইন্টার্ন নার্স সংখ্যা বৃদ্ধি করা অতীব জরুরি বলে মনে করছেন তারা। তবে এসব রোগ প্রতিরোধে সবাইকে এখন থেকেই সতর্ক থাকার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।