কার্তিকের খরা ঘুচিয়ে আগাম জাতের আমন আবাদ হাসি ফুটিয়েছে রংপুরের কৃষকদের। আশ্বিনের শেষ সপ্তাহ থেকে কৃষকের ঘরে উঠেছে এসব জাতের ধান। ভালো দামের পাশাপাশি মিলছে গোখাদ্য আর কৃষি শ্রমিকদের কাজের সুযোগ। দ্রুত ধান ঘরে ওঠায় আগাম জাতের আলু চাষে নেমে পড়েছেন কৃষকরা। আগাম জাতের আমন ধান নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। রংপুরে ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসবে পরিণত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রংপুর জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯২৩ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন। এ বছর আগাম জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ২৪৪ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি-৭৫, ব্রি-৭১, ব্রি-৩৩, ব্রি-৬২, হাইব্রিড ব্রি-০৪, হাইব্রিড ব্রি-৫, হাইব্রিড ময়না, টিয়া, ধানি গোল্ড, সুবর্ণ-৮, বিনা-১৭, বিনা-১৬, বিনা-২১, বিনা-২২সহ বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চফলনশীল জাত। সরেজমিন দেখা যায়, মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বর্গাচাষি আব্দুর রাজ্জাক ৪৬ শতাংশ জমিতে উচ্চফলনশীল ধান চাষ করেছেন। এ মাসের শেষের দিকে তার ধান খেতে সোনালি পাকা ধান বাতাসে দুলছে। তিনি ধানকাটা হলে ভুট্টা চষ করবেন বলে জানান। সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের ডাঙ্গীরপাড় এলাকার কৃষক আনারুল ইসলাম ৫০ শতক জমিতে উচ্চফলনশীল স্বল্পমেয়াদি গোল্ড জাতের আমনের আবাদ করেছেন। আশপাশের জমিতে কাঁচা ধান থাকলেও তার খেতে সোনালি পাকা ধান বাতাসে দুলছে। আনারুল ইসলামের সঙ্গে মাঠে ধান কাটার কাজ করছেন নুর নবী, আফজাল হোসেন। একইভাবে কেরানীর হাটের গোল্ডেন বীজ হিমাগারের সামনে ধান কাটছিলেন মোসলেম উদ্দিন। নুর মোহাম্মদ, আনিছুল, মমদেলসহ অন্যান্য কৃষি শ্রমিক রাস্তার পাশে ধান মাড়াই, খড়ের আঁটি সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। নুর মোহাম্মদ বলেন, ছোট্ট বেলাত অগ্রহায়ণ মাসোত ধান কাটছিল। কার্তিক মাসোত মাইষের কাম নাই, খাওয়া নাই। অ্যালা আগুর জাতের ধান বেরাইছে। ফলনও ভালো হয়। আশ্বিন মাস থ্যাকি ধান কাটতোছি। এরপর আলু লাগাবার পামো। আগের চাষবাস পাল্টি গেইছে। কৃষি শ্রমিক মমদেল বলেন, কার্তিক মাসোত কাম ছিল না কারো। অ্যালা সারা বছরোতেই হামার কাম থাকে। ধান কাটা, আলু গাড়া, শাকসবজি লাগা কাম লাগি থাকে।
কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, আমি দুই দোন জমিতে আগাম জাতের আমান ধান লাগিয়েছি। এখানে ২৫ শতকে এক দোন জমিতে ২০ থেকে ২২ মণ ধান হয়েছে। এখন আগাম আলু লাগাব। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুর জেলায় আগাম জাতের আমন আবাদের ফলে কৃষকরা আগাম আলুসহ শীতকালীন শাকসবজি চাষ করতে পারছেন। সেই সঙ্গে তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট রংপুরের গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, খরা ও বন্যাসহনশীল এবং স্বল্পমেয়াদি আগাম জাতের ধান আবাদের কারণে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতি খরা, অতি বৃষ্টি বা অসময়ে বৃষ্টি, বন্যার ফলে কৃষকরা যে ক্ষতির শিকার হন, সেটি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। ফলে বর্ধিত জনগোষ্ঠীর যে চাহিদা, সেটা মেটানো যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিটির (বিনা) রংপুর উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আলী জানান, এরই মধ্যে বিনা-২১, বিনা-২২সহ বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চফলনশীল জাত কৃষক কাটা শুরু করেছে কৃষক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু ধানের ওপর চাপ বেশি। তাই ধান উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিজ্ঞানীরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কৃষিকে লাভজনক করতে আধুনিক চাষপদ্ধতি, সার ব্যবস্থাপনা, সেচ ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাসহ স্বল্পমেয়াদি, উচ্চফলনশীল ও আগাম জাতের ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। যার ফল হচ্ছে কৃষকরা এখন আশ্বিন থেকেই ধান ঘরে তুলতে পারছেন।