স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন শতবর্ষী রংপুর জেলা পরিষদ ভবন

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

রংপুর জেলা পরিষদ ভবন দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। প্রায় ১০৮ বছর আগে ভবনটি নির্মিত হয়। এমন জেলা পরিষদ ভবন দেশের আর কোথাও নেই। এর দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ও আভিজাত্যনির্ভর শিল্পশৈলী চোখে পড়ার মতো। ভবনটি ইন্দোস্যারানিক আদলে নির্মিত স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন, যা বাংলার সমৃদ্ধশালী ইতিহাস মোঘলীয় নির্মাণ কৌশলকে মনে করিয়ে দেয়। এটি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের পরিচায়কও বটে। দূর থেকে নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার এদেশের শাসনব্যবস্থায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনুভব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কয়েক দফায় আইনের পরিবর্তন করা হয়। স্থানীয় সরকার আইনের ভিত্তিতে তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রবর্তন করা হয়। প্রত্যেক জেলায় গঠিত হয় জেলা পরিষদ বা ডিস্ট্রিক বোর্ড। সেই ধারাবাহিকতায় ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর জেলা পরিষদ। আর এই অবকাঠামো গড়ে উঠে ১৯১৫ সালে। শতবর্ষী এই জেলা পরিষদ ভবন চত্বরে রয়েছে একটি বিদ্যুৎ আদালত ও কম্পিউটার আলো নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রয়েছে নামাজ আদায়ের জন্য একটি মসজিদও। প্রতিদিন স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেকেই একটু সময়ের জন্য গাছগাছালি ভরা সবুজে ঘেরা জেলা পরিষদ চত্বরে ঘুরতে আসেন। পাখির কিচিরমিচির ডাক আর সাদা মেঘের সাথে মিশে থাকা উঁচু মিনারগুলোতে খুঁজে পায় তৃপ্তি। দুই সন্তানকে নিয়ে জেলা পরিষদ চত্বরে ঘুরতে দেখা যায় এক নারীকে। তিনি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা এলাকা থেকে এসেছেন। সুলতানা জেরিন নামে এই দর্শনার্থী বলেন, এখানকার পরিবেশটা ভালো। দেখতেও ভালো লাগে। সবমিলিয়ে অনেক সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান। আমরা রংপুর শহরে কোনো কাজে এলেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানে ঘুরে যাই। ছবি তুলি, ভিডিও করে রাখি। তিনি আরো বলেন, দূর থেকে জেলা পরিষদের ফটক দেখলেই যে কারো মন চাইবে ভেতরটা একটু ঘুরে দেখতে। এটা দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় ভবন। জেলা পরিষদ চত্বরে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা দরকার। এটা হলে সেবা নিতে আসা লোকজনও উপকৃত হবেন। বিপ্লব হোসেন নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, রংপুর জেলা পরিষদ ভবন এই বিভাগের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। আমরা সময় পেলেই ঘুরতে আসি। ভবনের মিনারগুলোর দিকে তাকালেই ভালো লাগে। চোখের সামনে প্রাচীন ঐতিহ্যময় ভবনগুলোর ছবি ও কারুকার্য ভেসে ওঠে। রংপুর ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন।

স্থানীয় মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমাদের এই বিভাগীয় শহরে রংপুর জেলা পরিষদ ভবনটি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এখানকার পরিবেশ দিনে একরকম, রাতে আরেকরকম। শতবর্ষী এই ভবনটাতেই যাত্রা শুরু করেছিল উপমহাদেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কারমাইকেল কলেজ। ১৯১৬ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সালে মূল ক্যাম্পাসে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ভবনেই চলেছে কারমাইকেল কলেজের সব কর্মকাণ্ড।