ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি আক্রান্তের হার ২৯ শতাংশ

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী অন্ধত্বের প্রধান কারণ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামে ভয়াবহ চোখের রোগ, যা বাংলাদেশের ২৯ শতাংশের মধ্যেই পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে প্রধান গবেষক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও প্রখ্যাত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত ডায়াবেটিস এবং রেটিনাবিষয়ক ‘ডায়াবেটিস অ্যান্ড রেটিনা : বিজ্রিং দ্য গ্যাপ’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ভেট্রিও-রেটিনা সোসাইটি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বিএসএমএমইউয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম ও বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির কার্যকরী সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। জরিপের প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রেটিনপ্যাথি আক্রান্তের হার ২৯ শতাংশ।

এর মধ্যে নন-প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনপ্যাথি ১৮ শতাংশ এবং প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনপ্যাথি ১১ শতাংশ। তবে বাকি ৭১ শতাংশের ডায়াবেটিক রেটিনপ্যাথি নেই। সেমিনারে বলা হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বিশ্বব্যাপী কর্মজীবী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বাড়ছে। এই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্ধত্বের প্রধান কারণ। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০৩ মিলিয়ন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৬১ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই উদ্বেগজনক বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী সক্রিয় পদক্ষেপ এবং সচেতনতা প্রচারের জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হয়। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রভাব কমানোর চাবিকাঠি প্রাথমিক শনাক্তকরণের মধ্যে নিহিত। ইতিবাচক ফলাফলের জন্য স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের বাস্তবায়ন এবং চোখের যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মত স্ক্রিনিং ক্ষতির অগ্রগতি রোধ করতে পারে। তবে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে, যা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা দ্বারা উত্থাপিত চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোকে দ্রুত আপডেট করতে হবে।

জানা গেছে, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জটিলতা সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলো রেটিনায় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে এই রক্তনালীগুলো বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। রক্তনালীতে ‘ পেরিসাইট’ নামে একটি অংশ থাকে, যা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে রক্তনালীর পেরিসাইট ভেঙে যায় এবং রক্তনালী থেকে রক্ত ও রক্তরস বের হয়ে যায়। এই রক্তরস বের হয়ে রক্তক্ষরণ তৈরি করে, যা ‘রেটিনাল হেমোরেজ’ নামে পরিচিত। এ রক্তক্ষরণের আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। প্রথম পর্যায়ে এই রক্তক্ষরণ রেটিনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে এই রক্তক্ষরণ রেটিনার বাইরে চলে আসে, যা ‘প্রিরেটিনাল হেমোরেজ’ নামে পরিচিত এবং পরবর্তী ধাপে তা রেটিনার সম্মুখভাগে যে জেলি-ভিট্রিয়াস অংশে প্রবাহিত হয় এবং তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ পর্যায়টি ‘ভিট্রিয়াস হেমোরেজ বা ইন্ট্রাজেল হেমোরেজ’ নামে পরিচিত। এই ধাপ চলমান থাকলে একসময় রক্ত, রক্তনালী, ভঙ্গুর রেটিনা ও জেলি একত্র হয়ে ট্র্যাকশন ফোর্স তৈরি করে, যা ভঙ্গুর রেটিনাকে সম্পূর্ণ ছিঁড়ে ফেলে। এই স্টেজটি অ্যাডভান্সড স্টেজ হিসেবে ধরা হয়। গবেষণায় প্রধান গবেষক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রখ্যাত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। সহযোগী হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটির পাবলিকেশন সেক্রেটারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (ভিট্রিও রেটিনা) ডা. মোহাম্মদ আফজাল মাহফুজউল্লাহ ও অ্যান্ডোক্রইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম।