বিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ সিওপিডি

সচেতনতার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) শীর্ষ পর্যায়ের রোগ। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে এটি তৃতীয়। এতে আক্রান্ত প্রতিবছর অন্তত ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় ভয়ংকর এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। গতকাল বুধবার বিশ্ব সিওপিডি দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের আয়োজনে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এসব কথা জানানো হয়। বক্তারা বলেন, অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে সিওপিডি অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের রোগ। দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক উপাদান শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করার ফলে শ্বাসনালী ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ তৈরি হয়। পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর সব কারণের মধ্যে এটি তৃতীয়। তাই এই ভয়ংকর রোগ সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে এবং প্রতিরোধে সচেষ্ট হতে হবে। সেমিনারে জানানো হয়, সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই রোগে ভোগা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর এই রোগে বিশ্বে কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ মারা যায় এবং কমপক্ষে ৩০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। তবে অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ হ্রাস করা, জৈব জ্বালানির ক্ষতিকর দিক থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং ধূমপানে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে এই রোগটি সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্বাসতন্ত্রের সুস্থতার জন্য মুখে মাস্ক অবশ্যই পড়তে হবে। ধূমপান পরিহার ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, কলকারখানার ধোঁয়াসহ সকল ধরনের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা, তামাক চাষ বন্ধ করা এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ অনেকটাই নির্মূল করা সম্ভব। ধূমপানই সিওপিডির প্রধান কারণ। তাই এ বিষয়ে সবকে সতর্ক করতে হবে। সেমিনারে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আক্রান্ত ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ু কুঠুরিগুলো নিষ্ক্রিয়া হয়ে যায় (এমফাইসিমা) অথবা শ্বাসনালীর অংশগুলোর আবরণের ধরন পরিবর্তিত হয়ে বাড়তি মিউকাস নিঃসরণ করে এবং সিলিয়া বা প্রক্ষেপযুক্ত আবরণীয় সংখ্যা কমে যায় (ব্রংকাইটিস)। ফলে দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কফ নিঃসরণ ও শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে প্রচ্ছন্ন হয়ে উঠতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে এবং এক সময় এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, তখন রোগী নিজের দৈনন্দিন কাজকর্ম করতেও শ্বাসকষ্টে ভোগেন। একই সঙ্গে দানা বাঁধে সিওপিডিজনিত অন্যান্য জটিলতা, যেমন- হৃদরোগ, মাংসপেশির দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, বিষণ্ণতা ও ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি নানা ধরনের বাড়তি সমস্যা। এ সময় ধোঁয়ামুক্ত চুলা ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করেন তিনি। একইসঙ্গে ইটভাটার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শীতকালে বিশেষ সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, শীতকালে সিওপিডি আক্রান্তদের রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজতর হবে। এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিএসএমএমইউতে জনসচেতনতামূলক র‌্যালির আয়োজন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ব্রিদিং ইজ লাইফ-অ্যাক্ট আরলিয়ার।’