চট্টগ্রামে আবারো অস্থির পেঁয়াজের বাজার

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চট্টগ্রামে আবারো অস্থির হতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ১০ টাকা বেড়ে পণ্যটি বিক্রয় হচ্ছে প্রতি কেজি ৯৫ টাকায়। অপরদিকে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১২০ টাকা দরে। অথচ দু’সপ্তাহ আগেও খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রয় হয়েছিল ৮৫ টাকায়। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাটের খুচরা বাজার ও খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি করার ক্ষেত্রে পুরো নগদ টাকা দিয়ে এলসি খুলতে হচ্ছে। তার ওপর ডলার রেট বেড়েছে, গাড়ি ভাড়া বেশি, পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। অন্যদিকে যেভাবে ব্যয় বেড়েছে সেভাবে বিক্রি নেই। মূলত এসব কারণে পণ্যটির বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ বলেন, ডলার রেট বেশি তাই এলসি খোলার সময় শতভাগ মার্জিন দিয়ে (ক্যাশ টাকা শোধ করতে হচ্ছে) পণ্য আনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আগে যেখানে আমাদের এখানে ১৮ থেকে ২০ গাড়ি পেঁয়াজ আসত, এখন সেখানে ৬ থেকে ৭ গাড়ি পেঁয়াজ আসছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামটা বেড়ে গেছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমে আসবে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ স¤পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, স্থল বন্দরগুলো দিয়ে পেঁয়াজ কম আসছে। ফলে খাতুনগঞ্জেও পেঁয়াজ কম আসছে। তাই দামটা বেড়ে গেছে। তার ওপর ডলারের দাম বেড়েছে। ধরুন, পণ্য আনার সময় আমাকে প্রতি ডলার ১১৩ টাকা দরে রেট দিল। কিন্তু পণ্য যখন আসল তখন আমাকে ডলার প্রতি ১২৫ টাকা করে অর্থ শোধ করতে হচ্ছে। এসব কারণে আমদানিকারকরা এলসি খুলতে চাচ্ছেন না। তাই আমদানি কমায় পেঁয়াজের দামটা বাড়তি। হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, ভারত সরকার প্রতি টন পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৮০০ ডলারে। এই ৮০০ ডলার ব্যাংকে এন্ট্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ৩০ টনের কিছু গাড়ি আছে, এগুলোতে করে পেঁয়াজ আনতে গেলে আমাদের ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকে নগদ জমা দিতে হচ্ছে। এত টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকটের কারণে পণ্য কম আসছে। তাই দামটাও বেড়ে গেছে। হিলি স্থলবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, এই সময়ে আগে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দিনে ৪৫ থেকে ৬০টি পেঁয়াজের গাড়ি ঢুকত। এখন প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ গাড়ি পেঁয়াজ ঢুকছে। এই সংকটের কারণে পণ্য কম আসছে। এ ছাড়া দাম বেড়ে গেছে। এদিকে পাইকারি বাজারে পেয়াজের দাম বাড়ায় খুচরায়ও পেয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানান, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারের ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে নগরীর বহদ্দারহাটের যমুনা স্টোরের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে খুচরা প্রতিকেজি পেয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। অথচ দু’সপ্তাহ আগেও পেয়াজের কেজি ১০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, বাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে নানা কারণ বা অজুহাত দেখাচ্ছে। ক্রেতা সংকট, পরিবহন বা ডলার রেট বেশি। এসব আসলে কিছুই না। বাজারে পণ্যের সরবরাহও ভালো আছে। ব্যবসায়ীরা এখন অতি মুনাফা করতে অজুহাত পেলেই মাত্রাতিরিক্ত দাম আদায় করছে।