হরতাল অবরোধে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে গত এক মাসে কয়েক দফা হরতাল আর অবরোধের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক মাসে তাদের ক্ষতি ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে ব্যবসায়ীরা এখন আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছেন। রাজধানীর নতুনবাজার এলাকার কনফেকশনারি দোকানের মালিক আলম বলেন, চলতি মাসে ঘন ঘন হরতাল-অবরোধের কারণে বিক্রি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ হাজার টাকার কেনাবেচা হতো, এখন তা কমে এসেছে ৩ হাজারে। মেরুল বাড্ডার মুদি দোকানদার কবির হোসেন বলেন, বিক্রি কমে গেছে, যে পরিস্থিতি তাতে ব্যবসার লালবাতি জ্বলতে বাকি নেই। অনেক ব্যবসায়ীই বলছেন, লাভ তো দূরের কথা, এখন পুঁজিতেই টান পড়েছে।

দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ায় এবং পরিবহণ ভাড়া বাড়ায় মানুষ বেশি দামে পণ্য কিনছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের আগে ক্রয় করা পণ্য সময়মতো পাচ্ছেন না। সরবরাহকারী ও পণ্য উৎপাদনকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাবের পর উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সহ্য করতে পারছেন না।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সোয়ারীঘাট, বাদামতলী ও ওয়াইজঘাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের কারণে তারা বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিক্রি চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আগে থেকেই ব্যবসা ভালো চলছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হরতাল-অবরোধ। গত ৩১ অক্টোবর অবরোধ শুরু হয়। এরইমধ্যে ১৪ দিনের অবরোধের কবলে পড়েছে দেশ। ছোট-বড় ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, ব্যাংক ঋণের বোঝা এড়াতে তারা বন্ধু-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করছেন। এসএমই খাতকে দেশের লাইফলাইন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এ খাতটি দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অর্থনৈতিক শুমারি-২০১৩ অনুসারে, দেশে ৭৮ লাখ ৮ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫২ শতাংশ কুটির, ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ ক্ষুদ্র, ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছোট, শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ মাঝারি ও শূন্য দশমিক ০৭ শতাংশ বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উদ্যোক্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপে যখন উৎপাদন খরচ বেড়েছে, তখন দেশে ছোট আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তারা বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া ও একাধিক সংকটে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় কম পণ্য কিনছেন। এ ছাড়া কাঁচামাল ও পরিবহণ খরচ বেশি হওয়ায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মানুষের চলাচল ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে গেলে তার প্রভাব ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ে।

বিশেষ করে দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ চ্যালেঞ্জের প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা যখন আরো বাড়বে, তখন তারা উৎপাদন ও ব্যবসার পরিসর কমিয়ে আনবেন। একটি দেশে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক টানাপড়েন থাকবে। তবে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যতটুকু সম্ভব সচল রাখা যায় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সবকিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।