বিল্ডিং কোর্ড মানা হচ্ছে না রংপুর নগরীতে
বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর ব্যুরো
বিল্ডিং কোর্ড না মেনে রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। নকশাবহির্ভূত এসব বহুতল ভবন নির্মাণ করায় সিটি করপোরেশনের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে ভবন মালিকরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। নিয়ম না মানা এমন ভবনের সংখ্যাই বেশি। নগরীর পূর্বগেট এলাকায় নিয়মবহির্ভূতভাবে মোহনা হাউজিংয়ের একটি বহুতল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসী-এর কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল পূর্বগেট, ধাপ, রাধাবল্লভ, মুন্সিপাড়া, সাতগড়া, পীরজাবাদ, বড়বাড়ী, দেওডোবা, গণেশপুর, আলমনগর, বিনোদপুর, কেল্লাবন্দ, ভগী, রামপুরা, কামাল কাছনা, তাজহাট, বড় রংপুর, আরাজি ধর্মদাস, মাহিগঞ্জ, খোর্দ্দ রংপুর, বাহার কাছনা, নীলকণ্ঠ, কুকরুল, আমাশু মৌজায় দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। এসব এলাকায় বড় বড় আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন গড়ে উঠছে। এসব বহুতল ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশন থেকে নকশা অনুমোদন নিলেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। ফলে নগরীতে অগ্নিদুর্ঘটনা, ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি ও জলাবদ্ধতা, যাতায়াতসহ নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। নগরীতে এসব সংকট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। রংপুর নগরীর রাধাবল্লভ এলাকার শাহানা পারভিন নামে এক গৃহবধূ জানান, তিনি তার এলাকায় এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার কাছে যে ফ্ল্যাটটি কিনেছেন। তিনি সিটি করপোরেশন থেকে ছয় তলার অনুমোদন নিয়েছেন। কিন্তু নির্মাণ করা হয়েছে সাততলা। সিটি করপোরেশন থেকে নকশা অনুমোদন নিচ্ছে এক ধরনের আর ভবন নির্মাণ করছে আরেক নকশা অনুযায়ী। ফ্ল্যাট মালিকরা এর বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য এর নির্মাতাকে চাপ প্রয়োগ করলেও তিনি তা কর্ণপাত করছেন না বলে জানান তিনি। নগরীর কামালকাছনা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, চাকরি জীবনে জমানো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। কেনার সময় যে নকশা আমাকে দেখানো হয়েছে, পরে দেখি আরএক রকমের। ভবনগুলো নিচে ঠিক থাকলেও সেগুলো ওপরে গিয়ে বাড়িয়ে নিচ্ছে ভবন মালিকরা। এতে করে প্রতিবেশীদের নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমন সমস্যা বেশিরভাগ এলাকার। আমরা চাই বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হোক। নগর পরিকল্পনাবীদ রোখসান মৌ জানান, একটি ভবনের নকশা অনুমোদন করলেই কিন্তু দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা নয়। নকশা অনুযায়ী সেই ভবনটি নির্মাণ হয়েছে কিনা, সেটা তদারকির দরকার। কিন্ত এখানে তা করা হচ্ছে না। তিনি জানান, রংপুর নগরীর বেশির ভাগ ভবন নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে তদারকি না করার কারণে যে যেভাবে পাচ্ছে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, রংপুর সিটি করপোরেশনের জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়নি। নগরীর মাস্টার প্ল্যান নেই, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নেই। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় আমরা ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা সংশ্লিষ্ট শাখা ভবন পরিদর্শন করতে পারছি না, অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারছি না। নকশার বাইরে ভবন নির্মাণের মতো অপরাধ করছেন বিত্তশালীরা।
রংপুর সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নগরীতে প্রায় ১০ হাজার ভবনের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ তলার অধিক উচ্চতার ভবনও রয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশন ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও জনবল কাঠামো এখন পর্যন্ত অনুমোদন হয়নি।