দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী অঞ্চলে অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে বেসরকারি নার্সিং সেক্টর। নায্য অধিকার বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা নানারকম নিগ্রহে বর্তমানে দিশেহারা। অমানবিকভাবে তাদের খাঁটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ৬ মাসের ইন্টার্নশিপে দৈনিক ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ‘নাইট ডিউটি’ করছেন বিনা পারিশ্রমিকে। এরইমধ্যে রহস্যজনক কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বিএসসি কোর্সের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন বন্ধ রাখা হয়েছে। জানা গেছে, দেশে মূলধারার নার্সিং কোর্স রয়েছে ৫টি। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএনএমসি) এসব পরিচালনা করে। এরমধ্যে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি-ইন-নার্সিং কোর্সকে অনার্স সমমানে উন্নীত করেছে সরকার। এ কোর্স করে বিশ্বের যেকোনো দেশে স্কলারশিপে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন ও চাকরির সুযোগ রয়েছে। অনেকেই স্কলারশিপে গিয়ে উচ্চতর পড়ালেখা ও কর্মরত রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে এ কোর্স নিয়েই যত বিপত্তি। তথ্যমতে, একাডেমিক অধ্যায়ন শেষে হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের ৬ মাস ইন্টার্ন বাধ্যতামূলক। সকাল, সন্ধ্যা ও রাত- এ তিন শিফটে সপ্তাহে ৬ দিন ডিউটি করতে হয় তাদের। সকাল ও সন্ধ্যার শিফটে ৬ ঘণ্টা করে এবং রাতের শিফটে ডিউটি করতে হয় ১২ ঘণ্টা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইন্টার্নশিপকালীন শিক্ষার্থীদের কোনো সম্মানি ভাতা দেওয়া হয় না। উল্টো হাসপাতালভেদে ৫-১০ হাজার টাকা দিয়ে ইন্টার্ন করতে হয়। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ২০১৭-১৮ সেশনের ১১টি বেসরকারি নার্সিং কলেজের ২২১ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে টাকা দিয়ে ইন্টার্ন করেছেন। যদিও একই ডিউটি করে ৩টি সরকারি নার্সিং কলেজের ২৬৪ জন শিক্ষার্থীকে ইন্টার্ন ভাতা দিয়েছে সরকার। নিয়মের বেড়াজালে ফেলে হেনস্থা করা হয় বেসরকারির শিক্ষার্থীদের। হাসপাতালের ওয়ার্ডে পৌঁছতে এক মিনিট দেরি হলেই ওইদিন অনুপস্থিত দেখিয়ে প্রদান করা হয় শাস্তি। বাধ্যতামূলক করিয়ে নেওয়া হয় ‘ওভার ডিউটি’। বছর খানেকের ভেতর পরবর্তী দুই সেশন তথা ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ সেশনের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ইন্টার্ন করবেন। তাদেরও একই ফাঁদে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। নার্সিং কলেজের শিক্ষকদের বিভিন্ন কাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর ৩০ মিনিটের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যাতে বেসরকারি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের অমানবিকতার বিস্তর বিবরণ উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে বেসরকারি নার্সিং শিক্ষার্থীদের সংগঠন এসবিজিএসএন’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ বলেন, আমি নিজেই তো সিরাজগঞ্জ মেডিকেলে টাকা দিয়ে ইন্টার্ন করলাম। আমাদের দেখার কেউ নেই, সর্বত্র যেন নিগ্রহের শিকার আমরা। বেসরকারিতে পড়ালেখা করাটাই কী আমাদের অপরাধ? তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, আমরাই ৪২ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। সেটা না দিয়ে উল্টো টাকা নিলো। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম, ওখানে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল; রংপুর মেডিকেলে যোগাযোগ করেছিলাম, ওরা চেয়েছিল ৫ হাজার টাকা। উদয়ন নার্সিং কলেজের সদ্য পাস করা শিক্ষার্থী মো. সাগর বলেন, সম্মানি তো দূরের কথা, রামেক হাসপাতালে আমাদের ইন্টার্ন করতেই দেয় না। ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন নার্সিং কলেজের বিএসসি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আলভি হাসান অনিক বলেন, প্রাইভেট কলেজের স্টুডেন্টদের টাকা দেয় না, উল্টা ৬ মাসের জন্য একটা অ্যামাউন্ট নেয়। এটা রীতিমত অন্যায়। যদিও নার্স নেতারা একটি প্রজ্ঞাপনের কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে এসব বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের পোস্ট করা প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত ১৮ এপ্রিল উপসচিব ফারজানা সুলতানার স্বাক্ষর রয়েছে।