আজ বেগম রোকেয়ার ১৪৩তম জন্ম ও ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। লালফিতায় বন্দি দেহাবশেষ আনার প্রতিশ্রুতি ১৩ বছরে বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় গড়া স্মৃতিকেন্দ্রের বেহাল দশা। অবশেষে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। খুলছে আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সংগ্রহশালার নতুন দ্বার। স্মৃতিকেন্দ্রটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের পুরো চেহারা।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনায় রয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্র। এই গবেষণাকেন্দ্রে নারীরা প্রধান্য পাবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সংগ্রহশালা, গ্রন্থাগার, হেলথ সেন্টার, ধাত্রি, হস্তশিল্পসহ বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, মুক্তমঞ্চসহ বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে রোকেয়ার জন্মভিটায় একটি স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। স্মৃতিকেন্দ্রটি রয়েছে মাত্র ৩ একর ২৫ শতক জমিতে। সে সময় স্মৃতিকেন্দ্রে একটি অফিস ভবন, গেস্ট হাউজ, মিলনায়তন, ডরমেটরি, গবেষণা কক্ষ, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, গ্রস্থাগার করা হয়। স্মৃতিকেন্দ্রের ভেতর মনোরম পুকুরপাড়ে তৈরি করা হয় বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য। ২০০১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। বর্তমানে গ্রন্থাগার থাকলেও সেখানে যুগোপযোগী বই ও সাময়িকী নেই। মিলনায়তনের অবস্থাও খুব খারাপ। মঞ্চ ভেঙে গেছে অনেক আগেই। অধিকাংশ চেয়ারই ভগ্ন। নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও অধিকাংশ মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। সংগ্রহশালার স্থাপনা থাকলেও মূলত সংগ্রহে কিছুই নেই সেখানে। স্মৃতিকেন্দ্রটি বাংলা একাডেমি তত্ত্বাবধান করে থাকেন। দীর্ঘদিন থেকে স্মৃতিকেন্দ্রটি সংস্কার ও উন্নয়নের দাবি উঠে আসছিল। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলা একাডেমি।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ডা. কেএম মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের সবুজ পাতায় তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০২৩ জুলাই থেকে ২০২৬ অর্থবছরের মধ্যে এটি বাস্থবায়নের কথা রয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তর নকশা প্রণয়ন করবে। রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, গত ২০০৭ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্মৃতিকেন্দ্রকে বিকেএমই গার্মেন্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হয়। সেনা সমর্থিত সরকার চলে যাওয়ার পর এটি দখলমুক্ত করে রোকেয়া চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার দাবি থাকলেও বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। রংপুরের পায়রাবন্দের খোর্দমুরাদপুর গ্রামে বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের।
খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে তিনি কলকাতায় যান। তার লেখা অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন, অর্ধাঙ্গী, মতিচূর ছাড়াও অসংখ্য বই সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মারা গেলে তাকে কলকাতা শোদপুরে সমাহিত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিবছরের ৯ ডিসেম্বর নিজ ভিটায় সরকারিভাবে তিন দিনব্যাপী মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেগম রোকেয়াকে যথাযথভাবে স্মরণ করা হয়।