ভূমিকম্পে ৯০ শতাংশ মানুষ ভবন ধসে মারা যায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। গতকাল শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি আয়োজিত ‘ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি রোধে করণীয়’ বিষয়ক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথি বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক শাহরিয়ার অনির্বাণ ও স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি। ‘ভবন মালিকদের দায়িত্বশীলতাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি আমাদের আছে, প্রস্তুতির কি ওয়ার্ড হচ্ছে বিল্ডিং প্রিপেয়ার্ড। বিল্ডিং প্রিপেয়ার্ড রাখলেই আমাদের প্রস্তুতি অনেকাংশে হয়ে যায়। ভূমিকম্পে ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যায় বিল্ডিং ভেঙে তথা ভবন ধসে চাপা পড়ে। বাকি ১০ শতাংশ মারা যায় উদ্ধারের জন্য। উদ্ধারেও আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। ভূমিকম্পের ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হয়েছে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। লোকাল কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে হবে এবং তাদের ভূমিকম্পের পর সঙ্গে সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরো বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি অনেক হবেই। আমাদের একটা হিসেব আছে, ছয় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২৫ শতাংশ, সাত হলে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে। এখন থেকে আমরা যদি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করি, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাবে। ভূমিকম্পের সম্ভাবনার যে সাইকেলে আমরা আছি, সাত মাত্রার ভূমিকম্পে দেড়শ’ বছর, আট মাত্রা ভূমিকম্পে আড়াইশ থেকে ৩০০ বছর লাগে। দেড়শ’ বছরের সাইকেলে আমরা পড়েছি, এখনো হয়তো আরো ১০ বছর লাগবে, তাই এখন থেকেই আমরা যদি প্রস্তুতি শুরু করি, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমাতে পারব। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নগরের ৬৫ শতাংশ ভবনই দুর্বল মাটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। যা ভবন নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম কারণ। ভবন নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না, তা নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন পেতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। নির্মাণ শেষে বিল্ডিংয়ের অকোপেন্সি সার্টিফিকেট পেতেও বেশ কষ্ট হয়। এমনকি নকশা অনুমোদন ও কোড মেনে বিল্ডিং করাতেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। তিনি আরো বলেন, ভবন নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে ভবন মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। শুধু ঢাকা শহর নয়, দেশের সব জায়গায় ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যতক্ষণ পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সঙ্গ জড়িত নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৈতিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।