কোনো টমেটোর গা থেকে সবেমাত্র ফুল পড়েছে; আবার কোনোটির পড়েনি। সবই অপরিপক্ব। পুরো টমেটোর ভেতর-বাইর সবুজ বর্ণের। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- জমি থেকে তোলার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব টমেটো সবুজ থেকে লালচে বর্ণ ধারণ করে। অর্থাৎ কাঁচা টমেটো পাকায় রূপ নেয়। মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, রাতারাতি কীভাবে এমন হচ্ছে। তাহলে কি ব্যবসায়ীরা অধিক লাভে ‘বিষ’ খাওয়াচ্ছে ভোক্তাদের? ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা শুধু জমি থেকে টমেটো কিনে খোলানে (খোলা মাঠে প্লাস্টিক-খড় পেতে) রাখেন। এরপরে চুলে দেওয়া শ্যাম্পু স্প্রে করা হয় টমেটো পরিষ্কারের জন্য। তারপরে রোদে রাখলে এমনিতেই টমেটোর কালার লাল হয়ে যায়। তারা টমেটোতে ক্ষতিকার হরমোন প্রয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করলেও পাশে বোতল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে টমেটোতে ক্ষতিকারক হরমোন প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে চাষিরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা অধিক মুনফার জন্য হরমোন প্রয়োগ করে থাকেন। এছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কথায় উঠে এসেছে হরমোন ব্যবহারের বিষয়টি। গতকাল বিকালে গোদাগাড়ী উপজেলার গোপালপুরের আশপাশের এলাকায় এমন হরমোন ব্যবহার করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। এই এলাকায় বিভিন্ন জমি থেকে টমেটো কিনে ব্যবসায়ী শামসুল আলম বাবু খোলানে রাখা হয়েছে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক টমেটোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কাজ করছেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ টমেটো পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ নষ্ট টমেটোগুলো দূরে ফেলে আসছেন। কেউ বা সবুজ থেকে লাল হওয়া টমেটোগুলো আলাদাভাবে একত্রিত করছেন। যে টমেটোগুলো প্রস্তুত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য। শুধু বাবুর খোলানে নয়, আশপাশের প্রায় সব খোলানে এমন কর্মযজ্ঞ চলছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর রাজশাহী জেলায় টমেটো চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। যা উপজেলার হিসেবে সিংহভাগ গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটো চাষ হয়। গেল বছর (২০২২) মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর ও ২০২১ সালে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল। তবে জেলায় মোট ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির মধ্যে গোদাগাড়ীর চাষাবাদ বাদ দিলে বাকি থাকা ২০০ হেক্টর সব উপজেলাগুলোতে টমেটোর চাষ হয়েছে। চাষিদের দাবি, এখন টমেটোর বাজার ও চাহিদা ভালো, বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এই দুই কাজে লাগায় ব্যবসায়ীরা। তারা অপরিপক্ব টমেটো কৃষকের জমি থেকে তুলে নেয়। এরপরে একত্রিত করে ইথিলিন হরমোন স্প্রে করে। এতে করে টমেটো কাঁচা অবস্থায় পেকে যায়। পরে ব্যবসায়ীরা ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেয়।