বাসাভাড়া পায় না ঋষি সম্প্রদায়ের ১৫ লাখ মানুষ

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সমাজে বর্ণপ্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনো অবহেলা, বৈষম্য, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের ঋষি সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। নিজেদের গ্রাম বা পাড়ার বাইরে বাসাভাড়া নিতে গেলেও তা পান না তারা। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অন্যান্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছেন এ জনগোষ্ঠীর মানুষরা। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বঞ্চনার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন ঋষি সম্প্রদায়ের ‘অ্যাডভোকেসি ফোরাম, ঢাকা’। তাদের এ আয়োজনে সহযোগিতা করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থা (জিবিএসএস)।

সমাজ-সভ্যতা বহুপথ এগোলেও তাদের বঞ্চনা আজও কাটেনি। এখনো সমাজের ‘অস্পৃশ্য’ সম্প্রদায় হিসেবে বিবেচিত ঋষি-মুনিরা। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সমাজের সাধারণ জনগোষ্ঠীর মতো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত এবং এ সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের বঞ্চনার নানা কথা ও উত্তরণে করণীয় নিয়ে সুপারিশ তুলে ধরেন ঋষি সম্প্রদায়ের দুজন তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে একজন কঙ্কা দাস। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, সারা দেশে প্রায় ১৫ লাখ ঋষি জনগোষ্ঠী রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় দুই লাখ জনগোষ্ঠী ঢাকা শহর ও এর আশপাশের ২৬টি ক্লাস্টার বা পাড়ায় অমানবিক জীবনযাপন করছেন। তাদের বেশিরভাগই নিম্নবর্ণের এবং চামড়াজাত কাজে বিশেষ করে পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ন্যায়বিচারের পাশাপাশি সাংবিধানিক অধিকার না পাওয়াসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কঙ্কা দাস আরো বলেন, ‘আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত, জীবিকাও অনিশ্চিত। সামাজিক পরিচয় ও কম মর্যাদা নিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এমনকি ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষকে সাধারণ এলাকায় বাসাভাড়া নিয়েও থাকতে দেওয়া হয় না। বাধ্য হয়ে নিজেদের পাড়ার ভেতরে ঘর করে পরিবারগুলো বসবাস করছে। একটি ঘরেই বাবা-মা, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, মেয়ে, মেয়ের স্বামী এবং ছেলেমেয়ের সন্তান একসঙ্গে গাদাগাদি করে জীবন পার করছেন।’ ঋষি সম্প্রদায়ের তরুণ প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সব জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের মৌলিক ও মানবিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারী।

অথচ শুধু ঋষি সম্প্রদায়ের হওয়ায় আমরা উপেক্ষিত। অনেকক্ষেত্রে ঘৃণার পাত্র হিসেবে পরিগণিত। সরকার এ গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর না দেওয়ায় আমরা সরকারি সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। পিছিয়ে থাকা এ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কারো তেমন আগ্রহ নেই। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট নির্বাচনি অঙ্গীকার এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।’ সংবাদ সম্মেলনে ঋষি সম্প্রদায়ের অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে চারটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আত্মকর্মসংস্থান বিষয়ে ঋষি সম্প্রদায়ের বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। নিরাপদ পরিবেশে বসবাসের জন্য পানি, স্যানিটেশন, ইউটিলিটি পরিষেবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ঋষি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষা কোটা বাড়াতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি; যেমন- বিধবা, বয়স্ক, মাতৃত্বকালীন ও প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি টিসিবির পণ্যে অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, ‘ঋষি সম্প্রদায়ের অ্যাডভোকেসি ফোরামে যুক্ত হয়ে এ সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা ওদের দাবি আদায়ে এগিয়ে এসেছে, এটাকে আমরা উৎসাহিত করছি। ওরা ওদের দাবি-দাওয়ার কথা বলছে মুখ খুলে, সেখানে আমরা শুধুই সঙ্গে থেকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি- সরকার ঋষি সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশের (এডাব) পরিচালক একেএম জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মোসাম্মৎ মোরশেদা বেগম, কাজীরবাগ পঞ্চায়েত সভাপতি সুজন দাস, সাধারণ সম্পাদক কিশোর দাস, জিগাতলা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রতন দাস প্রমুখ।