গতকাল দেশজুড়ে পালিত হয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আলোকিত বাংলাদেশের নগর ব্যুরোদের পাঠানো খবর।
রাজশাহী : রাজশাহীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের ৫২তমবার্ষিকীতে জাতির সূর্যসন্তানদের গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের পর থেকে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন- পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. অলিউল আলম। আরো উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) ড. মো. মোকছেদ আলী, রাজশাহী বিভাগ স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক শাহানা আখতার জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আব্দুল মান্নানসহ রাজশাহী জেলার বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির বিজয় যখন আসন্ন, তখনই ঘটে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম সেই হত্যাকাণ্ড। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় অনিবার্য জেনে এ দেশকে মেধাশূন্য ও পঙ্গু করার উদ্দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
আর এদের সহযোগিতা করেছিল এ দেশীয় দোসররা। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্মম ও নৃশংসভাবে গণহত্যা চালায়। নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা। তাই সেসব শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হয়। এতে পুলিশ প্রশাসনসহ শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
রংপুর ব্যুরো : রংপুরে নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রংপুর নগরীর টাউন হলের পেছনে শহীদ স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিভাগীয় প্রশাসন, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিভাগীয় পুলিশ, রংপুর জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান জেলা প্রশাস, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামের মেট্রোপলিটন পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন স্মৃতিসৌধের বেদিতে পৃথক পৃথক পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য দোয়া মোনাজাত করা হয়।
এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২৩ পালন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর নগরীর দমদমা বধ্যভূমিতে শোক র্যালি ও শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: হাসিবুর রশীদ, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনা ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মজিব উদ্দিন আহমদ।পরে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, দপ্তর ও আবাসিক হলগুলোর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী ইউনিয়ন, বেরোবি শাখা ছাত্রলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।