শীত নামছে উত্তরে কমছে তাপমাত্রা

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাজশাহী ব্যুরো

কার্তিক পেরিয়ে বিদায় নিতে চলেছে অগ্রহায়ণ। সোনালি ধানের নুইয়ে পড়া শীষে মুক্ত ঝরা শিশির দিয়ে প্রকৃতি থেকে চলে যাচ্ছে ঋতুরানী হেমন্ত। হামাগুড়ি দিয়ে আসছে শীত। একটু একটু করে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। কনকনে ঠান্ডা বাতাস জানান দিচ্ছে, শিগগিরই জেঁকে বসতে যাচ্ছে শীতের তীব্রতা। এরই মধ্যে আবহমান বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। সংসারের সব অভাব-অনাটন ছাপিয়ে নতুন চালের পিঠাপুলির সুগন্ধে মৌ মৌ করতে শুরু করেছে কৃষান-কৃষানির আঙিনা। আমন ও আউশসহ নতুন সব জাতের ধান কেটে ঘরে তোলার ধুম পড়ে গেছে গ্রাম বাংলায়। ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে কৃষককূলে যখন বেড়েছে ব্যস্ততা তখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। একটু দেরিতে হলেও শীত পড়তে শুরু করেছে। এ ডিসেম্বরে আসছে শৈত্যপ্রবাহও। আজই প্রথম তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আর শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে এই তাপমাত্রা নামতে পারে এক অঙ্কে। সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রিতে নামলেই তা শীত হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই অর্থে এ কথা বলাই যায় যে, বাংলা সনের পঞ্জিকা ঘুরে আবার অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে ‘শীতকাল’। উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে গতকাল ভোর থেকেই মিলছে পুরোদস্তুর শীতের আমেজ। ঘনকুয়াশার চাদর ভেদ করে সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও শরীরে মিলেছে হিমেল হাওয়ার অনুভব। শুধু ভোরেই নয়, সন্ধ্যা ও রাতেও রাজশাহীতে শীতের মাত্রা টের পাওয়া যাচ্ছে গেল দু-দিন থেকে। এ জন্য শীতের ভারি পোশাক উঠেছে, সব বয়সের মানুষের শরীরে। এছাড়া শীতের শুরুতেই গুটিশুটি হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষ শীত নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন এখনই। আর রাজশাহীর নিম্নবিত্ত মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে ভিড় করছেন শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক (ইএমও) ডা. মো. বিল্লাল হোসেন জানান, কয়েকদিন থেকে ক্রমেই ঠাণ্ডার মাত্রা বাড়ছে। তাই হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনো শীতের প্রকোপ বেশি না থাকায় তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যের মতো নয়। অন্তঃবিভাগের চেয়ে এখন বহির্বিভাগেই ভিড় বেশি। আর শীতের আবহাওয়াজনিত কারণে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই আবার ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, কয়েকদিন থেকেই তাপমাত্রা নামছে। তবে রাজশাহীতে আজই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ ডিসেম্বর ছিল ১২ দশমিক ৩, ১২ ডিসেম্বর ১৪ দশমিক ৫ এবং গতকাল ১৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জানতে চাইলে আবহাওয়া কর্মকর্তা লতিফা হেলেন আরো বলেন, সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।