ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাতিরঝিলের রঙিন পানির নৃত্যে হতাশ দর্শনার্থীরা

হাতিরঝিলের যত বয়স হচ্ছে, ততই এর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে
হাতিরঝিলের রঙিন পানির নৃত্যে হতাশ দর্শনার্থীরা

সন্ধ্যা হলেই ভিন্ন রং-ঢংয়ে মেতে ওঠে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল। জ্বলে ওঠে নিয়ন বাতি, বাড়ে লোক সমাগম। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাসের আশায় ভিড় জমানো মানুষগুলো প্রকৃতির পাশাপাশি উপভোগ করে উন্মুক্ত মঞ্চের অনুষ্ঠান। দর্শনার্থীদের জন্য চিত্তাকর্ষক ওয়াটার ফাউন্টেইনও চালু হয়েছিল। মাগরিব ও এশার নামাজের পর গানের তালে তালে চলত রঙিন পানির নৃত্য। ‘ওয়াটার ড্যান্স’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা এই শো দেখতেও ভিড় জমাত দর্শনার্থীরা। প্রায় ৩ বছর ধরে বন্ধ থাকলেও চালু করায় কোনো হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের। ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল (নববর্ষের দিন) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বাড়াতে ‘বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের ‘মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ওয়াটার ফাউন্টেইন’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন প্রধানমন্ত্রী এটিকে নগরবাসীর চিত্তবিনোদনে তার পক্ষ থেকে নববর্ষের উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন। উদ্বোধনের সময় শেখ হাসিনা মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইনের প্রতি যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি হাতিরঝিলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সবাইকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ওয়াটার ফাউন্টেনটিসহ হাতিরঝিলের সব স্থাপনার সৌন্দর্য রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। এসব স্থাপনার যত্র-যত্র এটা-ওটা ছুড়ে না ফেলা, এসব স্থাপনা জাতীয় সম্পদ, এগুলো রক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ আমাদেরই দায়িত্ব।’ হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে হাতিরঝিল প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৭ সালে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য আরো বাড়াতে এ ওয়াটার ফাউন্টেইন চালু করা হয়। এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বর্ণিল ফোয়ারাও বলা হয়। যার দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কখনো ফুলের মতো, কখনো লম্বা, কখনো গোল, কখনো ত্রিভুজসহ বিভিন্ন আকৃতিতে নানা রঙের পানির ফোয়ারা চলত। ফোয়ারার পানি ৩০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৮০ মিটার উঁচু পর্যন্ত উঠত। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে আছে ফাউন্টেইনটি। সবগুলো বাতিও নষ্ট হয়ে গেছে। রাজউক ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, হাতিরঝিলের গুলশান-পুলিশ প্লাজা অংশে রয়েছে এই নান্দনিক ওয়াটার ফাউন্টেইন, যা আগে মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মহানগর প্রজেক্ট, মুধবাগ, তেজগাঁও এলাকা থেকেও দেখা মিলত। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার খান বলেন, ওয়াটার ফাউন্টেইন চালুর পর হাতিরঝিল নান্দনিক রূপে সেজেছিল। তখন গানের তালে চলতো লাল, নীল, বেগুনি, সবুজসহ অসংখ্য রঙের পানির নাচন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এটি চলছে না। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।’ নিউ ইস্কাটন থেকে হাতিরঝিলের মধুবাগ অংশে ঘুরতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফয়সাল আমিন। সঙ্গে স্ত্রীসহ স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান। আলাপকালে ফয়সাল আমিন বলেন, ‘আগে হাতিরঝিলে পানির নাচন দেখতে প্রায়ই যেতাম। ভিডিও করে ফেসবুকেও দিয়েছি। কিন্তু হাতিরঝিলের যত বয়স হচ্ছে, ততই এর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত