খুলনায় মাঠজুড়ে হলুদের ঢেউ

রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নতজাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  খুলনা ব্যুরো

খুলনায় এবার সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের রেখা ফুটেছে। চলতি মৌসুমে খুলনায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নতজাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা। এ মৌসুমে ২৮৯ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে। ৯ উপজেলার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়।

বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। উন্নত জাতের বীজ ও সার প্রণোদনা পাওয়ার পাশাপাশি গত বছর সরিষা চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও প্রত্যেক সরিষা চাষি অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তন্মধ্যে দৌলতপুর মেট্রো এলাকায় ১৪ হেক্টর, লবণচরায় ৭ হেক্টর, রূপসা উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৫০ হেক্টর, দিঘলিয়া উপজেলায় ১২০ হেক্টর, ফুলতলা উপজেলায় ১৮০ হেক্টর, ডুমুরিয়া উপজেলায় ৪২০ হেক্টর, তেরখাদা উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, দাকোপ উপজেলায় ২৮ হেক্টর, পাইকগাছা উপজেলায় ২৬০ হেক্টর ও কয়রা উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।

গত বছর খুলনায় ১ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। এদিকে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার ১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের জন্য ১৩ হাজার ৬০০ জন চাষিকে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষি বিভাগ। দৌলতপুর মেট্রো এলাকার ৫০ জন, লবণচরা মেট্রোর ৫০ জন, রূপসা উপজেলার দুই হাজার জন, বটিয়াঘাটার এক হাজার ৮০০ জন, দিঘলিয়ার ১ হাজান ২০০ জন, ফুলতলার ১ হাজার ৪০০ জন, ডুমুরিয়ার ২ হাজার ৩০০ জন, তেরখাদার ১ হাজার ২০০ জন, দাকোপের ৩০০ জন, পাইকগাছার ১ হাজার ৮০০ জন ও কয়রার ১ হাজার ৫০০ জন চাষির প্রত্যেককে ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে সরিষার ফুল ঝরে দানা বাধতে শুরু করেছে। পাইকগাছা উপজেলার গদাপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়ুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত সরিষার আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদখালী, গড়ইখালী ও দেলুটি ইউনিয়নের সামান্য জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকরা বারি সরিষা ১ কোটি ৪১ লাখ ৫১ হাজার ৭১৮, বিনা-৯ ও ৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছে। এ ছাড়া কয়রার আমাদী, বাগালী ও সদর ইউনিয়নের বেশ কিছু স্থানে সরিষা চাষ করা হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সরিষা চাষি আনছার আলী, আব্দুস সামাদ ও সলুয়ার শহিদ জানান, তাদের ক্ষেতের আবাদকৃত সরিষা ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেয়ে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসিম কুমার দাশ বলেন, ধান কাটতে দেরি হওয়ায় সরিষা আবাদ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। কৃষকরা যদি আগাম জাতের ধান চাষ করে তাহলে ধান কাটার পর সময়মতো সরিষা চাষ করতে পারবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের আগাম জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

এ বছর উপজেলায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয়ের সৃষ্টি না হলে সরিষার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর, খুলনার উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তেলবীজ উৎপাদন বাড়াতে গত বছরের মতো এ বছরও চাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরিষা উৎপাদন বেড়েছে। আমাদের মাঠকর্মীরা সার্বক্ষণিক চাষিদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন। আশা করছি, ভালো ফলন হবে এবং ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।