রংপুর জেলার ছয়টি আসনে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার উৎসবমুখর পরিবেশে রংপুরে নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। শীতের কারণে ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি কম হলেও দুপুরের পর ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে ভিড় করে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর খবর পাওয়া যায়নি। ভোটাররা নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন।
রংপুরের কাউনিয়া-পীরগাছা এলাকায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন হওয়ায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও রংপুর-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী টিপু মুনশি। গতকাল পীরগাছা জেএন সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, ‘সকালে কুয়াশা আর শীতের কারণে ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও এখন ভোটার উপস্থিতি বাড়ছে। বিশেষ করে মহিলা ভোটারের উপস্থিতি বেশি লক্ষণীয়। টিপু মুনশি বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটাররা বিএনপি-জামায়াতের ভোট বর্জনকে প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রে এসে ভোট দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভোট-উৎসব চলছে। নৌকার সরকার থাকায় সারাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে পীরগঞ্জে। উন্নয়নে বদলে যাওয়া পীরগঞ্জবাসী নৌকাকে বিপুল ভোটে জিতাবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। লালদীঘির ফতেপুর মকিমপুর ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান করছেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ি ফতেপুর গ্রামের ভোটার। তিনি তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রংপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে।
নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনায় খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরোনো কায়দায় ভোট ডাকাতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বারবার এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা মানছে না বলে দাবি করেন জাপা চেয়ারম্যান। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি নগরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ৪ ঘণ্টায় দুই ভোট, তাও দিয়েছেন নৌকার এজেন্ট। জিএম কাদের বলেন, ‘এরই মধ্যে সকাল থেকে আমি তিনটি ঘটনা জেনেছি, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ভোট স্বাভাবিক হবে না, সেই ধরনের একটা আবহ তৈরি করা হচ্ছে সেইসব জায়গায়। তবে সব জায়গার খবর এখনো পাইনি।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করেছিলাম ভোট স্বাভাবিক হবে। কিন্তু রংপুর ছাড়া বেশির ভাগ জায়গায় ভোট স্বাভাবিক হচ্ছে না। আশঙ্কা ছিল, নির্বাচনে নিয়ে এসে আমাদের কোরবানি করা হবে। হয়তো বোঝা যাবে ভবিষ্যতে। কোরবানি করে নির্ভেজাল একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হবে, এটাই আমরা আশঙ্কা করছিলাম। এসব আশঙ্কা সত্যি হয় কি না- বিকাল হলেই বোঝা যাবে।’ শঙ্কা যদি সত্যি হয়, তাহলে দলের অবস্থান কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা যখন হবে তখন বলব। আগে থেকে কিছু বলতে চাই না। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি দেখে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগরের সভাপতি সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, জেলা কমিটির সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্য নেতারা। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ৬ সংসদীয় আসনে মোট ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে ৯ জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজন প্রার্থী।
এবারে রংপুর জেলায় মোট ভোটার ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪ জন। পুরুষ ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২৪ জন ভোটার রয়েছেন। জেলার মোট ৮৫৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ১৭৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হয়।