তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রংপুর অঞ্চলে ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরকম আবহাওয়া ধারাবাহিকভাবে থাকলে বীজতলার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এ বিষয় কৃষকদের পরামর্শ কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, বীজতলা নষ্ট হলে বোরো চারার সংকট দেখা দিতে পারে বলে কৃষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৮ লাখ ৭ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্দারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বীজতলায় ধানের বীজ করা হয়েছে ২৩ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমিতে। রংপুর জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে ৬ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমিতে বীজতলায় ধানের বীজ করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলার অধিকাংশ চারাই লালচে হলুদ হয়ে গেছে। লালচে হওয়ার পর আস্তে আস্তে পাতার আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বীজতলা রক্ষায় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে রাতে পানি রাখছে বীজতলায় এবং সকাল হলে তা সরিয়ে ফেলছে। আবার অনেকের অজ্ঞতাবসত বীজতলা নষ্টের পথে। রংপুর নগরীর পশ্চিম নীলকণ্ঠ গ্রামের কৃষক সুলতান আহমেদ বলেন, এক সপ্তাহ আগে যে পাতা কালো ছিল। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে লালচে হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ধানের চারা বীজতলা থেকে তুলে জমিতে রোপণ করতে পারব কি না, সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নীলকণ্ঠ মাস্টারপাড়ার আব্দুল মজিদ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়নি। তবে এরকম আবহাওয়া থাকলে বীজতলা নষ্ট হতে বেশিদিন লাগবে না। এরকম আশঙ্কার কথা জানান আরো কয়েকজন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, সারাদেশের মতো রংপুরেও কয়েকদিন থেকে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা। এই ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়। কিন্তু এখনও বীজতলা নষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে এরকম আবহাওয়া আর কিছু দিন থাকলে বীজতলা নষ্ট হতে পারে। এজন্য কৃষি অফিস থেকে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি নিয়মিত। সেই সঙ্গে মাঠে মাঠে গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখছেন আমাদের কৃষি কর্মকর্তা। কৃষকরাও আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, বীজতলা নষ্ট হওয়ার মূল কারণ তীব্র শীত। এজন্য রাতের বেলায় বীজতলায় পানি রাখতে হবে এবং দিনের বেলায় পানিটা সরিয়ে ফেলতে হবে।
তাহলে এটি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান এখন বীজ তলা নষ্ঠ হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। এসব বোরো ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য ইউরিয়া ও জিপসাম সার প্রয়োগের পাশাপাশি প্রতিদিন বীজতলার কুয়াশা ঝেড়ে দিতে হবে। চারাগুলোকে পারলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।