ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকার অতি নগরায়ণ

দেশের প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে

দেশের প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে

ঢাকাসহ সারা দেশে ক্রমবর্ধমান নগরমুখিতা ও দ্রুত নগরায়ণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগর ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে না। মানুষের জন্য বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব নগর নির্মাণ স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলেও বহুবিধ সমস্যা নগরজীবনকে নাজুক করে ফেলেছে। ঢাকার অতি বৃদ্ধি এখন শুধু ঢাকা শহরে নয়, সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বেন) সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। বাপা ও বেন যৌথভাবে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ: সমস্যা ও সমাধানবিষয়ক বিশেষ সম্মেলন’ শীর্ষক এক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। আগামী শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাপার সহ-সভাপতি ও বেনের প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের বড় শহরগুলোর, বিশেষ করে ঢাকার অতি বৃদ্ধি এখন শুধু ঢাকা শহরে নয়, পুরো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দুঃসহ যানজট বিভিন্ন শহরকে ক্রমে অচল করে দিচ্ছে এবং অন্যান্য নগর কেন্দ্রেও এই সমস্যা বিস্তৃত হচ্ছে। এভাবে সৃষ্ট যানজট দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যানজটে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন, ফলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, কেবল ঢাকায় যানজটের কারণে জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৩ সালের গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্সে ঢাকা বিশ্বের সপ্তম অবসবাসযোগ্য শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, গৃহস্থালি বর্জ্যরে পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই বর্জ্যরে মধ্যে বিপজ্জনক অজৈবিক অংশের পরিমাণ বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর উপাদানসংবলিত ক্রমবর্ধমান চিকিৎসাবর্জ্য। সম্প্রতি তেজষ্ক্রিয় উপাদানসংবলিত ইলেকট্রনিক বর্জ্যরেও আবির্ভাব ঘটেছে। অপরিশোধিত পয়োনিষ্কাশনের পানির মাধ্যমে শহরের আশপাশের নদীগুলো দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শহর বা নগরাঞ্চলে বসবাস করছে এবং নগরবাসীর প্রায় ৩২ শতাংশই ঢাকায় বাস করে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার অন্তত ৫০ শতাংশই শহরাঞ্চলে বসবাস করবে বলে আভাস দিয়েছে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ। এ বিষয়ের উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ তখন প্রধানত একটি নগরের দেশ হবে। যদিও বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে, আবহমানকাল ধরে একটি গ্রামের দেশ হিসেবে পরিচিত। কাজেই এটি একটি বড় পরিবর্তন হচ্ছে। এখন এই পরিবর্তন সঠিকভাবে ও সুষম হওয়া দরকার। তবে দেশে নগরায়ণ সুষম হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্যান্য শহরে নগরায়ণের হার যেখানে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ, সেখানে ঢাকায় নগরায়ণের হার ৪০ শতাংশের বেশি। কাজেই ভৌগোলিকভাবে আমাদের নগরায়ণ সুষম হচ্ছে না। বাপার সহ-সভাপতি ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর ৬৯ হাজার হেক্টর গ্রামীণ কৃষিজমি হারাচ্ছি। এই কৃষিজমি হারানোর ক্ষেত্রে বড় কারণ নগরায়ণ। ঢাকা শহরে ১ শতাংশ জমিতে ১০ শতাংশের মানুষের ৩৩ শতাংশ জিডিপি উৎপাদনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা রয়েছি।’ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাপার সভাপতি নুর মোহাম্মদ তালুকদার। বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন, বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়ক মো. খালেকুজ্জামান ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত