তীব্র শীতে বাড়ছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনা

* হিমেল হাওয়ার সঙ্গে জেঁকে বসা শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। * শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষের দুর্দশাও বেড়েছে

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

মাঘ মাসের শুরু হতে বাকি মাত্র এক দিন। বরাবরই মাঘের শীতে কাঁপুনি বাড়ে। মাঘের শীত নিয়ে রয়েছে নানা প্রবাদ। কিন্তু এবার পৌষের ক্রান্তিলগ্নেই হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে রংপুর অঞ্চলে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে জেঁকে বসা শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষের দুর্দশাও বেড়েছে।

কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় চরম বিপাকে এ অঞ্চলের শীতার্ত মানুষ। ভোর আর সন্ধ্যায় গ্রামে গ্রামে জটলা বেঁধে আগুন পোহানোর মাধ্যমে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকেই। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে কোথাও কোথাও ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও। কেউ কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়েও দগ্ধ হচ্ছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ১১ দিনের ব্যবধানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৪২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। দগ্ধ রোগীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে ১১ জন এবং বাকি ৩১ জনকে সার্জারি, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত গত তিন দিনে দগ্ধ হয়ে পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪২ জন দগ্ধ রোগী।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তাদের কেউ কেউ শীত থেকে বাঁচার জন্য আগুন পোহাতে কিংবা কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, গত তিন দিনে ভর্তি হওয়া পাঁচজনের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের কারও কারও শরীরের ১০-৪০ শতাংশ আবার কারও ৪০-৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ দগ্ধ রোগী নিজেদের অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনার শিকার হন। এদিকে গত বুধবার থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত এ তিন দিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচজন হলেন- কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সাজু মিয়ার স্ত্রী ববিতা বেগম (৩৫), কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার আশরাফুল আলমের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা (৬), রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার আলেয়া বেগম (৬৫), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সবুজ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী পলি রানী (৩০) ও নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মমিনুর ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪০)। তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে ও চুলার আগুনে শীত নিবারণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ সার্জারি ও শিশু ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীরা ছটফট করছেন। গত বুধবার বিকালে দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে ফুলবাড়ীর দগ্ধ শিশু আয়শা সিদ্দিকা। এই শিশুটির মা শাহানা শয্যার পাশে বসে আছেন। তিনি বলেন, চুলায় ভাত রান্না করছিলাম, এমন সময় মেয়েটি আগুন পোহাতে চুলার পাশে এসে বসে। কখন যে তার জামায় আগুন ধরে যায় বুঝতে পারিনি। কোমর থেকে পা পর্যন্ত পুড়ে গেছে। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে গেল বুধবার সকালে ভর্তি হয়েছেন আলেয়া বেগম। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বলছেন, অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। তারা সাধ্যমতো দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি রোগীদের আগুনের ব্যাপারে সচেতন করছেন। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. শাহ মো. আল মুকিত জানান, চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগীই শীতের তীব্রতা থেকে উষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। প্রতি শীত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিদগ্ধের এমন ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বার্ন ইউনিটসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রংপুরের বাইরে বিশেষ করে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ে এই অগ্নিদগ্ধের ঘটনা বেশি ঘটছে। সেখানকার চিকিৎসক ফারুক আলম বলেন, অল্প কয়েক দিন হলো রংপুর অঞ্চলে তীব্র শীত পড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে গ্রামের মানুষ খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে গরম পানির ব্যবহারও বেড়ে যায়। অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তারা সাধ্যমতো সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে অগ্নিদগ্ধ রোগী ছাড়াও রমেক হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির চাপ। এদিকে রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গতকাল সকাল ৯টায় রংপুরে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন একই তাপমাত্রা ছিল। রংপুর ছাড়াও বিভাগের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। একই সঙ্গে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা বিরাজমান রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি কিছুটা কমে আরও কমপক্ষে ২ দিন এমন তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে মেঘের আনাগোনা শুরু হতে পারে।