নতুন বছরের আগমনেও জমেনি ক্যালেন্ডার ব্যবসা

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বছর দশেক আগেও ইংরেজি বছরের শুরুতে বিভিন্ন ক্যালেন্ডার দিয়ে ঘর সাজানো ছিল যেনো খুব জরুরি একটি বিষয়। আর এর মাধ্যমে দিন-তারিখের হিসাব রাখা ছাড়াও বাড়ত ঘরের সৌন্দর্য। আবার ক্যালেন্ডার পুরাতন হলে সেগুলো কাজে লাগানো হতো বই-খাতার মলাট বাঁধতে। তবে সময়ের বিবর্তনে এখন সেসব বিষয় শুধু স্মৃতিই মনে হয়। ২০২৪ সালের শুরুতে অনেকেই নতুন ক্যালেন্ডার কিনে থাকলেও দিন তারিখ দেখার জন্য নির্ভর করছেন মোবাইল অথবা কম্পিউটারের। এরকমই একজন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আগে নতুন বছর এলেই অনেকে ক্যালেন্ডার উপহার দিতো। তখন এখনকার মতো প্রযুক্তির ছড়াছড়ি ছিল না। যে কারণে দিন-তারিখের হিসাব ক্যালেন্ডারেই দেখতে হতো। ক্যালেন্ডারে যেহেতু অনেক ধরনের ছবি থাকতো, তাই সেটি দিয়ে ঘরও সাজানো হতো। এখন আর কেউ ক্যালেন্ডার উপহার দেয় না। মোবাইল-কম্পিউটারে ক্যালেন্ডার থাকায় নিজ থেকেও কাগজের ক্যালেন্ডার কেনা হয় না। শুধু সরকারি ছুটির হিসাব রাখতে একটি ক্যালেন্ডার বাসায় রাখি।

ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয় বহু শতাব্দী আগে। কালের বিবর্তনে সেটি কাগজে ঠাঁই নেয়। নতুন বছর এলেই ঘরে ঘরে দেখা যেত নানা রঙ-ঢংয়ের ক্যালেন্ডার। মানুষ নিজ থেকে যেমন প্রয়োজন বা শখের বসে ক্যালেন্ডার কিনতেন, তেমনি শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকেও পাওয়া যেতো উপহার হিসেবে। আবার ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সেবামূলক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নতুন বছরের শুরুতে গ্রাহকদের উপহার দিতো। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় দিন দিন কমছে এর চাহিদা। দাম বাড়ায় দিনপঞ্জিকা কেনায় আগ্রহও হারাচ্ছে মানুষ। ব্যবসায়ীদের মতে, গত কয়েক বছর ধরেই ক্যালেন্ডারের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে তাদের।

২০২৩ সালের তুলনায় এবার একেবারে অর্ধেকে নেমে এসেছে বেচাকেনা। কারণ, হিসেবে কাগজের দাম বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক মন্দা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বলছেন তারা। তবে, মূল কারণ প্রযুক্তি। লোকজন এখন মোবাইল বা কম্পিউটারে তারিখ দেখে। পুরনো হলেও নতুন আকারে এসেছে হাতঘড়ির ক্যালেন্ডার। স্মার্ট ওয়াচেও এখন পূর্ণ ক্যালেন্ডার দেখে মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের কাছেও অতিরিক্ত অর্থ নেই। আবার কাগজের দামও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ক্যালেন্ডার ব্যবসায়। সাধারণত নভেম্বর মাসে সরকারি গ্যাজেট প্রকাশের পর ক্যালেন্ডার তৈরি শুরু করেন বিক্রেতারা। ডিসেম্বর আর জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। কেউ কেউ মার্চ পর্যন্ত ক্যালেন্ডার বিক্রি করেন। তবে তখন হাতেগোনা ক্রেতা ক্যালেন্ডারের জন্য আসে। যেসব ক্যালেন্ডার বিক্রি হয় না, সেগুলো রিম হিসেবে বিক্রি করে দেন বিক্রেতারা।

পল্টনের মাস্টার প্রোডাক্টসের স্বত্বাধিকারী মো. খোরশেদ আলম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ক্যালেন্ডার বিক্রি অনেক কমেছে। প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছর ৩ লাখ ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলাম। এর মধ্যে ৩০ হাজার বাকি রয়ে গিয়েছিল। এবার মাত্র দেড় লাখ তৈরি করেছি। এখন পর্যন্ত এক লাখ বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতাদের কথার সঙ্গে মিল আছে ক্রেতাদের কথারও। পল্টনে ডায়রি কিনতে আসা ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির কর্মকর্তা মো. রাকিব বলেন, গত বছর আমরা কোম্পানির পক্ষ থেকে ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার করেছিলাম। গতবার যে বাজেট ছিল, এবার সেই বাজেট আছে। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার শুধু ডায়রি নিচ্ছি। নবাবপুরের একটি ইলেকট্রিক দোকানের ইনচার্জ অমর দাস। তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা পরিচিত ক্রেতাদের শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে ক্যালেন্ডার আর ডায়রি দিতাম। কিন্তু ক্যালেন্ডারের প্রতি ক্রেতাদের এখন তেমন ঝোঁক নেই। তাই গত বছর থেকে শুধু ডায়রি দিচ্ছি। দোকানের পাশাপাশি ফুটপাত ও ফেরি করেও বিক্রি হয় সরকারিসহ বিভিন্ন কোম্পানির ক্যালেন্ডার। সেখানেও বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। ২০২৪ সালের ক্যালেন্ডারে বরাবরের মতো ফুল, পাখি, প্রকৃতি, পাহাড়, সাগর, বিমান, ব্রিজ, গাড়ি, স্থাপনা, মসজিদের চিত্র দেখা গেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামোর চিত্রও ফুটে উঠেছে ক্যালেন্ডারের পাতায়। যার মধ্যে রয়েছে, মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, থার্ড টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনা।