বাউল গানে যুক্ত হাজার শিল্পী

নারায়ণগঞ্জ শুধু ব্যবসা অর্থনীতি ও অন্যান্য দিকেই নয় বরং লোক সংস্কৃতিতেও সমৃদ্ধ। এ জেলায় বাউল গান করেন এমন বাউল রয়েছেন ৪০০’র বেশি। তারা সবাই একতাবদ্ধ। আর তাদের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র বাজান এমন রয়েছেন আরো ৪০০ জন। সব মিলিয়ে এখানে বাউল গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোক আছেন ১ হাজারের এর মতো। নারায়ণগঞ্জের বাউল নেতাদের একজন ফরিদ উদ্দিন বাধন জানান, এখানে প্রায় ১ হাজারের মতো বাউল শিল্পী আছেন। যারা বাউল গান করেন তারা এই গান গেয়েই অর্থ উপার্জন করেন এবং জীবিকা নির্বাহ করেন। বাউল একাডেমির মাধ্যমে জনসাধারণ যেন এ সম্পর্কে জানতে পারেন এটিই সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া। বাউল গান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত সংগীতের একটি অনন্য ধারা। এটি বাউল সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাধন গীত। আবহমান বাংলার প্রকৃতি, মাটি আর মানুষের জীবন জিজ্ঞাসা একাত্ম হয়ে ফুটে ওঠে বাউল গানে। আরও ফুটে ওঠে সাম্য ও মানবতার বাণী। এ ধারাটি পুষ্ট হয়েছে পঞ্চদশ শতাব্দীর তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের ভাব, রাধাকৃষ্ণবাদ, বৈষ্ণব সহজিয়া তত্ত্ব ও সুফি দর্শনের প্রভাবে। কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে, বাংলাদেশে বাউল মতের উদ্ভব ১৭ শতকে। এ মতের প্রবর্তক হলেন আউল চাঁদ ও মাধব বিবি। শহরে, গ্রামে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে বাউল সংগীত। সব ধরনের শ্রোতাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন বাউল গান। এ গানের অসম্ভব জনপ্রিয়তার পেছনে আছে এর সর্বজনীনতা, গভীর মানবিকতা বোধ। ইউনেসকো যে স্বীকৃতি বাউল গানকে দিয়েছে, তার অধিকাংশ কৃতিত্বই লালন সাঁইয়ের। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে যখন বিশ্বায়নের হাওয়া বাংলাদেশে লাগে, তার পরের কয়েক বছর বাউল গানের অন্ধকার যুগ। হিন্দি ধুমধাড়াক্কা আর অশ্লীল বন্যায় বাংলা গানের তখন হাঁসফাঁস অবস্থা। দুয়েকটা উল্লেখ করার মতো ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। ফিড ব্যাকের সঙ্গে আবদুর রহমান বয়াতীর যুগলবন্দিতে ‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি/কোন মিস্তরী বানাইয়াছে’। তারুণ্যের এক নম্বর পছন্দের তালিকায় ছিল বেশ কয়েক মাস। বাউল গানের সুন্দরীতমা চাঁদ ঢাকা পড়ে রইল অপসংস্কৃতির কালো মেঘে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লেগেছে বেশ কয়েক বছর। তবে যে নতুন রূপে বাউল গানের প্রকাশ ঘটল একবিংশ শতাব্দীতে তার সঙ্গে তুলনা চলে না আগেকার কোনো সময়েরই। ইউনেস্কো ২০০৫ সালে বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।