পৌষ মাস বিদায় নেওয়ার পথে আর এ সময়ই খুলনায় জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা এবং কনকনে হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। শীতের তীব্রতায় নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। গত কয়কেদিন ধরে খুলনায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা, বেড়েছে হিমেল বাতাসের দাপট। শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছেন নগরীর ছিন্নমূল মানুষ। খুলনা মহানগরীসহ জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গেল কয়েকদিনের শীতে শীতে জনজীবন স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে রাতের দিকে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসছে। এতে বিপাকে পড়ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষরা। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এ অবস্থার আরো কয়েকদিন স্থায়ী হবে। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার প্রভাব দেখা যাচ্ছে, নগরীর বিপণিবিতানগুলোতে। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড়, হাত-পা মোজা, টুপি, মাফলার, জ্যাকেট কিনতে অনেকেই সেখানে ছুটছেন।
গরম কাপড় গায়ে জড়িয়েও শীতের তীব্রতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তারা। প্রচণ্ড শীতের কারণে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবীরা। সকালে পথের ধারে খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে ছিন্নমূল মানুষদের। নগরীর রিকশাচালক আলাউদ্দীন বলেন, খুলনায় খুব ঠান্ডা পড়ছে। দুপুর পর্যন্ত সূর্য দেখা যায়নি। ঠান্ডা বাতাসে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। শহরে লোকজন কম, তাই আয় কম হয়েছে। বিকেলে তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। গোয়ালখালী বাসস্ট্যান্ডের বৃদ্ধা কবির হোসেন বলেন, খুব ঠান্ডা লাগছে। এ কারণে জ্বর-সর্দি-কাশি শুরু হয়েছে। ঘরে শুয়ে থাকার উপায় নেই। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি। তিনি বলেন, দুপুর পর্যন্ত সূর্য দেখা যায়নি। এখন কি করব, খাব কি বুঝতে পারছি না। নগরীর শিববাড়ির মোড়ের পথচারী আঃ হক বলেন, সকাল থেকেই কুয়াশায় চারপাশ ঢাকা পড়েছে। তারপরও কাজ থেমে নেই। পেটের তাগিদে বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এদিনের শীতের সকালে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে শিশুরা। প্রচণ্ড শীতে তাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। এদিকে, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁচি-কাশিসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খুলনা শিশু হাসপাতালেও বাড়ছে শিশু রোগীর চাপ। চিকিৎসকরা শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পানসহ গরম কাপড় ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় প্রচুর শীত। জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। এদের মধ্যে শিশুরোগীর সংখ্যা বেশি। খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ মো: সবিজুর রহমান জানান, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত নিউমোনিয়া আক্রান্ত বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ শীতজনিত রোগীদের সেবা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেছেন, শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। শীতবন্ত্র চাহিদা আরো দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরো বরাদ্দ আসবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে। খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সরকারি আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, সারাদেশের মতো খুলনা অঞ্চলেও তাপমাত্রা কমছে। গত শনিবার খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরে খুলনাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ রকম তাপমাত্রা আরো ২-৩ দিন থাকবে। ১৫ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা একটু বাড়বে। তবে ২০ জানুয়ারি পর আবার তাপমাত্রা কমবে। তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার এমন অবস্থা আরো কিছু দিন চলবে।