আগামী ২১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর। রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) তৃতীয়বারের মতো এ মেলা আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রতিবারই বাণিজ্য মেলার প্রবেশদ্বার নিয়ে দর্শনার্থীদের আলাদা আকর্ষণ থাকে। আর তাই এবার মেলার প্রবেশদ্বার হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেলের আদলে। দুপাশে থাকবে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কক্সবাজার রেলস্টেশনের প্রতিচ্ছবি। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হবে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে ইপিবির সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক বিবেক সরকার বলেন, আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় মেলাপ্রাঙ্গণে সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছরই বাণিজ্য মেলার প্রবেশদ্বার নিয়ে সবার আকর্ষণ থাকে।
এবার বাণিজ্য মেলার প্রবেশদ্বারে ভিন্নতা আনা হয়েছে। প্রবেশদ্বার হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেলের আদলে। দুই পাশে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, কক্সবাজার রেলস্টেশন ও গভীর সমুদ্রবন্দর। এভাবেই মেলার প্রবেশদ্বারের নকশা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ ছাড়া পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে সাজানো হচ্ছে। আশা করছি মেলা শুরুর আগেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে মেলার মূল আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন ও শিশুদের জন্য পার্ক। আমরা আশা করছি দর্শনার্থীরা এ বছর মেলায় অন্যরকম অনুভূতি পাবেন। ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক বলেন, মেলা আয়োজনে কিছু চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই।
সেসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা মেলার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি চলতি সপ্তাহে আমাদের প্রস্তুতি শেষ করতে পারব। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব যেভাবে মেলা আয়োজন করা হয়, এ বছর আসরা সেরকম করার চেষ্টা করছি। মেলাকেন্দ্রের ভেতরে সেল স্ক্রিনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মেলাগুলোর মতো ছোট ছোট স্টলে সীমানা দেওয়া হবে। ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে প্রয়োজন অনুযায়ী ডেকোরেশন করবে। তিনি আরও বলেন, মেলায় দেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের পসরা নিয়ে হাজির হবে। এ বছর ১০টি দেশ অংশ নিচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ অংশ নেবে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজার খোঁজার লক্ষ্য রয়েছে। গত বছর মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নের ফ্লোরের ন্যূনতম ভাড়া ছিল ২০ লাখ টাকা। এবার তা হয়েছে ২২ লাখ টাকা। একইভাবে সাধারণ স্টলের ভাড়া ন্যূনতম তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা এবং সংরক্ষিত স্টল চার লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর ৪৭ শতাংশ বাড়িয়ে সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়নের ন্যূনতম ভাড়া ১১ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রায় একই হারে স্টল-প্যাভিলিয়নের জামানত বাড়ানো হয়েছে। এ বছর মেলায় প্রবেশমূল্যও বাড়ানো হয়েছে। গতবছর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা ছিল, আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা ছিল। তা বাড়িয়ে এ বছর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৫ টাকা করা হয়েছে।
হলের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলে ৩৫০ স্টল থাকবে এবারের মেলায়। এর মধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে ১০০টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ১৫টি, জেনারেল স্টল, ফুডকোর্ট, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল প্রায় ১৭০টি এবং ইউটিলিটি বুথ থাকবে ৩০টি। এছাড়া ৯ টি ব্যাংক বুথ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সাটটি বুথ থাকবে। ইসলামী ব্যাংকের একটি বুথ এবং ট্যাক্স-ভ্যাটের জন্য সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ থাকবে। এতে করে রাজস্ব আদায় ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংকের বুথ স্থাপন হয়েছে। পাশাপাশি হলের ভেতরে নিজস্ব একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে, যাতে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবে। এ ছাড়া আরও ১২-১৫টি ফুট স্টল থাকবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ৫০টি বিআরটিসি বাস রাখা হচ্ছে জানিয়ে বিবেক সরকার বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে বাস সার্ভিস।
কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ৫০টি বিআরটিসি বাস চলবে। রাস্তার দুপাশে ২৫টি করে মোট ৫০টি বাস সারাদিন চলবে। এখানে ন্যূনতম একটি ভাড়া থাকবে। সম্ভবত ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা হবে ১৪ কিলোমিটার রাস্তার জন্য। ফ্রি সার্ভিস দিলে আশপাশের স্থানীয় লোকজনই বেশি চলাচল করবে। তখন দর্শনার্থীদের চলাচল কঠিন হবে। এজন্য মিনিমাম ভাড়া নেয়া হবে। শুক্র ও শনিবার চাহিদা অনুযায়ী বাস দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।