ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে সারা দেশে তাপমাত্রা আরো কমে যেতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, দেশের চার বিভাগে বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় ১৯ ও যশোরে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির কারণে কুয়াশা কমবে। এতে হয়তো সূর্য দেখা যেতে পারে। তবে আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশেই তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের সব জেলায়, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ এবং রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে।
চলতি মাস পুরোটাই দেশে বেশ শীত অনুভূত হবে। আজ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আজ মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
রাজশাহী : গত কয়েক দিন থেকে দেখা মেলেনি সূর্যের। কিছুক্ষণের জন্য উঁকি দিলেও স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। গত কয়েক দিনেও তাপমাত্রা ছিল নিম্নমুখী। এর মধ্যে যোগ হয়েছে বৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আরো শীত বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা যায়নি। কিন্তু গতকাল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হয় বৃষ্টি। শেষ হয় ৬টা ৩৬ মিনিটে। বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে শূন্য দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে বৃষ্টি ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি। এই বৃষ্টিতে দিনের তাপমাত্রা বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মাঘ মাসের শুরু থেকে থেকে ছিল আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। পরপর দুই দিন একই অবস্থায় ছিল। বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার তাগিদে কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুলনা : গতক সকাল ৯টার পর খুলনায় বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ও শীতের কনকনে বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে মানুষ। একদিকে মাঘের হাড় কাঁপানো শীত, অন্যদিকে হালকা বৃষ্টি। এ দুইয়ে মিলিয়ে খুলনার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় অফিসগামী ও খেটে খাওয়া মানুষরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃষ্টি, উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে।
তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, মাঘের এই বৃষ্টিতে সর্বনাশ হবে রবিশস্যের। পানি জমলে কিছু ফসলের ক্ষতি হতে পারে। গতকাল সকালে খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ বলেন, মৌসুমি লঘুচাপের কারণে খুলনায় সকাল ৯টার পর হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ বৃষ্টি কয়েক ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টি ও মেঘ কেটে গেলে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
বরিশাল : জেলায় হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই বৃষ্টি হওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। গতকাল সকাল থেকেই বৃষ্টির কারণে বরিশালে শীতের মাত্রা আরো বেশি অনুভূত হচ্ছে। এরই মধ্যে শীত আর বৃষ্টির কারণে বরিশালের বেশ কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখতে দেখা গেছে। তবে বৃষ্টি আর শীতের কারণে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা ছিল। অতি প্রয়োজন ছাড়া তেমন কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। শীতের মধ্যে এমন বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। সবজি বিক্রেতা আহম্মদ বলেন, বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা কমে গেছে। ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে বরিশালে সূর্যের দেখা মেলেনি। এতে অনুভূত হয় তীব্র শীত। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় শীত মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি। এ কারণে আরো বেশি ঠান্ডা পড়েছে। আগামী কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক হুমায়ন কবির জানান, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল গত রোববার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ রানা রুবেল জানান, তীব্র শীতের কারণে বরিশালসহ আশপাশের এলাকা ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকতে পারে। এ মৌসুমে বৃষ্টি হওয়ায় শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে। আগামী ৪ থেকে ৫ দিন শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলেও পূর্বাভাস দেন তিনি।