রংপুর অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে টানা ১১-১২ দিন ধরেই সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঠান্ডার সঙ্গে প্রকৃতিতে ঘন কুয়াশার দাপট। কয়েকদিনের ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা। তবে আলুর রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আলুচাষিদের পরিমিত স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার রংপুর জেলায় আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ১৮০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর। এবারে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৭৫০ হেক্টর বেশি আলুর চাষ হয়েছে রংপুরে। সরেজমিন দেখা যায়, আলুর খেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আলুর খেত দেখে ভালো মনে হলেও শঙ্কায় চাষিরা। নিয়মিত কুয়াশা কাটাতে স্প্রে করায় খরচ বাড়ছে তাদের। ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো ভরা আলুর মাঠ রক্ষা করে চলেছেন আলুচাষিরা। নগরীর বোতলা এলাকার আলুচাষি হামিদুল ইসলাম বলেন, যদি কোনো আলু খেতে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ দেখা দেয়, রাতারাতি পুরো খেত নষ্ট করে দেয়। পুরো পরিশ্রম আর বিনিয়োগ মাটি হয়ে যায়। যদিও এখনো রোগ ধরেনি, তবে আরো কয়েকদিন কুয়াশা হলে যে কোনো সময় রোগ ধরতে পারে। রংপুরে যে পরিমাণ ঘনকুয়াশা বিরাজ করছে তাতে খেতের ক্ষতির আশঙ্কাই করছি। এ জন্য আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছি। মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বর্গাচাষি দুলুমিয়া জানান কয়েকদিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহে আলুর লেট ব্লাইটের শঙ্কায় আছি।
তিনি বলেন, আলু ফলন ভালো হয়েছে। দাম ও বেশ ভালোই পেয়েছি। নগরীর পূর্ব শালবন এলাকার হারুন জানান, আলু খেতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরিমিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করছি। তবু ভয় কাটছে না। তবে আল্লাহর রহমতে বৃষ্টি হয় নাই। বৃষ্টি হলে ক্ষতির শঙ্কা আরো বাড়বে। একই কথা জানান তছলিম উদ্দিন। তিনি এবারে জমি লিজ নিয়ে ১২ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন। অনেক খরচ হয়েছে। আলুর খেত দেখে ফলন ভালো হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তবে ঘন কুয়াশার কারণে সেই স্বপ্নে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তছলিম উদ্দিন বলেন, রাতে ঘুম হয় না। আলুর খেতেই রাত্রীযাপন।
তবে বৃষ্টি না হলে খুব বেশি ক্ষতি দেখছি না। কেননা, নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শে পরিচর্চা চলছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আলুর খেতের জন্য সবচেয়ে বেশির শঙ্কার কারণ হলো ঘন কুয়াশা। এই ঘন কুয়াশা দীর্ঘদিন থাকলে আলুর মধ্যে লেট ব্লাইট হতে পারে। আমরা কৃষি অফিস থেকে এ নিয়ে আলু চালিদের নিয়মিত আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের পরিমিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমিসহ আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে পরামর্শসহ সরেজমিন আলুর খেত দেখা হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা মনে হলে সঠিক পরিচর্চার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে তিনি আলুচাষিদের লেট ব্লাইট থেকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।