ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গাজীপুরে মিলল সুলতানি আমলের নিদর্শন

গাজীপুরে মিলল সুলতানি আমলের নিদর্শন

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে পাওয়া গেছে সুলতানি আমলের নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ির পাশে সন্ধান পাওয়া এই নিদর্শনটির নাম একডালা দুর্গ। গত এক মাসের খনন কাজে অনুসন্ধান দল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দ্বাদশ শতাব্দীকালে এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল। কথিত আছে দিল্লির সুলতানের আক্রমণের হাত থেকে বাংলার সুলতান এসব দুর্গের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করেছিলেন। গত ২৬ ডিসেম্বর কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে রানির ভিটা হিসেবে পরিচিত একডালা দুর্গে খনন কাজ শুরু করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ঐতিহ্য অন্বেষণ নামের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক। খনন শুরুর প্রায় এক মাসের মাথায় সেখানে একডালা দুর্গের ইতিহাস উন্মোচন হতে থাকে। ওই স্থানে ইট, মৃৎপাত্র, নলযুক্ত বিশেষ মৃৎপাত্র, সাধারণ মৃৎপাত্রসহ বিভিন্ন বস্তু পাওয়া গেছে। খনন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দরদরিয়া গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ৭টি খাদে খনন করে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু ও তথ্য উপাত্ত আবিষ্কার করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় দুর্গের আকার, পরিমাপ ও কিছু বস্তু আবিষ্কৃত হয়। দুর্গের আকার অর্ধচন্দ্রাকৃতির। সেখানে আছে দুর্গ-প্রাচীর ও পরিকল্পিত পরিখা। দুর্গের পূর্ব দিকে অর্ধচন্দ্রের পরিধিব্যাপী পরিখা এবং পশ্চিম দিক ঘেঁষে আছে বানার নদ। আবিষ্কৃত দেওয়ালের একটি অংশে দুর্গ প্রাচীরের বুরুজ পাওয়া গেছে। দুর্গ প্রাচীরের সঙ্গে সংযুক্ত বুরুজটি অর্ধবৃত্তাকার। দুর্গের অভ্যন্তর থেকে বুরুজের চিহ্নও পাওয়া গেছে। বুরুজ অংশে একটি মাটির বল আবিষ্কার হয়েছে। এটি প্রাচীনকালে ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির গোলকের ব্যবহার স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ধরনের বস্তু উয়ারী-বটেশ্বরেও পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়। বুরুজের অপর প্রান্ত (উত্তর পাশে) লাগোয়া কোনো দেওয়ালের অংশ নেই। বরং সেখানে চুন-সুরকির ঢালাইয়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্গ-প্রাচীরের পূর্বদিকে একটি প্রবেশদ্বার বা তোরণ ছিল। এ দুর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। খনন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দরদরিয়া দুর্গটি প্রকৃতি এবং মানব সৃষ্ট পরিখার এক দারুণ কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। অর্ধচন্দ্রাকৃতির দুর্গের পরিধি অংশের দুর্গ-প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৫৫০ মিটার এবং নদীর দিকে সরলরেখায় দুর্গ-প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৩৩০ মিটার। দুর্গের অভ্যন্তরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এ পর্যন্ত মানববসতির চিহ্ন বা আলামত পাওয়া গেছে সমতল ভূমি থেকে ২ মিটার নিচ পর্যন্ত। সেখানে পাওয়া বুরুজটি ভিত্তি থেকে ৮৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ইটের গাঁথুনী টিকে আছে। সামরিক দিক বিবেচনায় বুরুজটি খুবই কৌশলগত স্থাপনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্গ-প্রাচীরটি দুই দফায় নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। প্রথম নির্মাণ পর্বে ভিত্তিসহ নিয়মিত ইটের গাঁথুনির দেয়াল ৬৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। ইটের টুকরা এবং মাটি মিশ্রিত পদার্থ দিয়ে নির্মিত দেয়াল পাওয়া গেছে ১৪৫ সেন্টিমিটার। তবে দুর্গ প্রাচীরের ওপরের অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। দুর্গের ইটের গাঁথুনি থেকে প্রাচীন স্থাপত্যের ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে বলে জানান খননের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তারা জানান, ইটের দেওয়াল তৈরির গাঁথুনীতে মর্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি। মর্টার হিসেবে মাটির ব্যবহার বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্যের একটি ঐতিহ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত