রংপুরে শীতে কাহিল গবাদিপশু

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ঘন কুয়াশার মাঝে গত চার দিন ধরে দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও কনকনে শীতের প্রকোপ কমেনি। এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে রংপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া। এমন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতিতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকরা। এদিকে এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় গবাদিপশুর বদহজম ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা। রংপুরের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, সকালে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তামাত্রা রয়েছে। কখনও কখনও ১০ এর নিচে নামছে। এরকম তাপমাত্রা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে বলে জানান তিনি। এই হিমেল হাওয়া ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহে মানুষের পাশাপাশি অনেক বেশি সমস্যায় পড়েছে গবাদিপশু।

ঠান্ডা থেকে গবাদি পশুকে রক্ষার্থে এবং রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে বেশি বেশি করে গরুর ঘর পরিষ্কার ও পরিছন্ন রাখার পরামর্শ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। সরেজমিন খামার ঘুরে দেখা যায়, কনকনে শীতের এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় গবাদিপশুগুলোকে পুরোনো কাঁথাকম্বল, চট, পুরোনো জামা এবং যার যা আছে তাই দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তবে অধিকাংশ খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামারের ভেতরে কোনোভাবে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য বড় বড় চট ও কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে খামারে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাসহ গরুগুলোকে পরিছন্ন রাখা হয়েছে। তবে সব থেকে বেশি সমস্যায় রয়েছে তিস্তা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের গবাদিপশুগুলো। খামারি আসিফুল ইসলাম আসিফ জানান, এখনও খুরা রোগের ধাক্কাই সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি খামারিরা। এবারে খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫ শতাধিক গরু মারা গেছে। এরমধ্যে শীত এসেছে।

শীতে ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যা যুক্ত হয়েছে। প্রচন্ড শীতের কারণে গরুর জ্বর হওয়ায় খাওয়ার রুচি কমে গেছে। এতে প্রডাক্টশন কমে যাচ্ছে, নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। এই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েছে গবাদি খাদ্যের দাম বাড়ায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে হু হু বাড়ছে খাদ্যের দাম। খামারে গরু নিয়ে চরম আশঙ্কায় রয়েছি। সবমিলিয়ে খামারিরা খুব বিপদে আছি। এদিকে, চরাঞ্চলের মোন্নাফ হোসেন জানান, ঘন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাসে গরু-ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। গরুকে নিয়ে বাইরে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না, আবার খড় বা অন্য দানাদার খাদ্য কিনে খাওয়ানোর সাধ্য নেই।

নদীবেষ্টিত এলাকা কাউনিয়ার ঢুসমারা চরের রফিকুল ইসলাম জানান, এই শীতে মানুষের যেমন কষ্ট হয় তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে গরু-বাছুরের। আমরা তো ঠান্ডা লাগলে বলতে পারি কিন্তু গরুর-বাছুররা তো বলতে পারে না। তাই চটসহ অন্যান্য পোশাক গায়ে দিয়ে তাদের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নগরীর গুপ্তপাড়ার ছাদেকুল ইসলাম বলেন, শখ করে কিছু ছাগল লালন-পালন শুরু করি। যদিও এখন অনেক ছাগল রয়েছে। বর্তমানে তীব্র শীতের কারণে ছাগলগুলোকে আগলে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। এরকম ঠান্ডা চলতে থাকলে ছাগলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রংপুর ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন জানান, মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে খামারের খরচ বেড়ে গেছে। নিয়মিত পরিচর্চার পাশাপাশি রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে প্রাতিষ্ঠানিক খরচের পাশাপাশি প্রচুর দানাদার খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভিটামিন ও চিকিৎসকে নিয়মিত দেখাতে হচ্ছে। এছাড়াও ঠান্ডার কারণে গরুর প্রডাক্টশন কমে গেছে। সবমিলিয়ে শীতের এই সময়টায় আয় কম হলেও ব্যয় বাড়ে। রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বলেন, ঠাণ্ডায় গবাদিপশুর ক্ষুধামন্দা ও নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিভিন্ন খামার ও এলাকা পরিদর্শন করে গবাদি পশুগুলোকে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে গরম কাপড় ও দানাদার খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকলে সেটি দেওয়া হচ্ছে। আমরা বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করছি। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।