রংপুরে শীত মৌসুমে রেকর্ড সবজি চাষ

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় শীত মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ সবজির চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় চলতি বছর সবজি চাষে ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষক। ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে অনেকেরই। স্বল্পমেয়াদি শাকসবজি আবাদ কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করবে কিন্তু সবজির দাম দ্বিগুণ থাকায়, সাধারণ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের মধ্যে রংপুর, লালমরিহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলা এলাকাভুক্ত। এসব জেলাকে চলতি বছর প্রচুর পরিমাণে সবজি চাষ হয়েছে। এ বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় শীতকালকে সবজির মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। অথচ মৌসুমেও শীতকালীন বিভিন্ন সবজির দ্বিগুণ দামে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। গত বছর এই শীত মৌসুমে সবজির দাম একেবারেই নাগালের মধ্যেই ছিল। এবারে উৎপাদনে খরচ বেশি ও সিন্ডিকেট এই দুই কারণে সবজির দাম চড়া বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চড়া দামে সবজি বিক্রি হলেও রংপুরের সবজি উৎপানকারী কৃষকরা ‘পাইকার’ নামের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। রংপুরে উৎপাদিত সবজি প্রতিদিন ট্রাকযোগে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার প্রধান কাঁচামালের আড়ত কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে।

এই সুযোগেই নানা অজুহাতসহ পাইকারদের কারসাজিতে শাকসবজি চাষ করেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ঠকছেন কৃষক। সরাসরি মহাজনদের কাছে দরদাম করে সবজি বিক্রি করার সুযোগ নেই কৃষকের। শুধুমাত্র হাত বদল করেই লাভ করছেন স্থানীয় পাইকাররা। অথচ বাজার থেকে ভোক্তাদের সেই সবজি কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দাম দিয়ে। রংপুর অঞ্চলের মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলা সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এরপরেই গংগাচড়া। এই দুই উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এবং স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার অভাবে ন্যায্য মূল্য থেকে বেশিরভাগ সময় বঞ্চিত থাকেন কৃষক। মিঠাপুরের মমিনপুর, বলদিপুকুর, জায়গীরহাট, বাড়ইপাড়া, তাজনগর, কোনাপাড়া, রানীপুকুর মির্জাপুর, গ্রামে গিয়ে সরেজমিন দেখা যায়, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, সিম, গাজর, করলাসহ রকমারি শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে মাঠ। কৃষক-কৃষাণীদের ব্যস্ত সময় কাটছে সবজি খেত পরিচর্যায়। কনকনে শীতেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে মাঠের কাজ। দম ফেলারও যেন সময় নেই তাদের। কেউ খেত থেকে ফসল তুলছেন, কেউ বা পরিচর্চা অথবার স্প্রে করছেন সবজি খেতে। বর্তমানে সবজির জানা যায়, কৃষক পর্যায়ে মুলা ২ থেকে ৩ টাকা, পাইকারি ৫ থেকে ৭ টাকা, ভোক্তা পর্যায়ে ২০ টাকা, পাতাকপি কৃষক পর্যায়ে ১০ টাকা, পাইকারি ১৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ২০ টাকা, ফুলকপি কৃষকপর্যায়ে ২০ টাকা, পাইকারি ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ টাকা, কাঁচা পিয়াজ কৃষক পর্যায়ে ৫০ টাকা, পাইকারি ৬০ থেকে ৬৫ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচা মরিচ কৃষক পর্যায়ে ৪০ টাকা পাইকারি ৫০ টাকা, ভোক্তা পর্যায়ে ৬০ টাকা, ঢোপা বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪৫ টাকা, পাইকারি ৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৮০ টাকা, চিকন বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পাইকারি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো কৃষকপর্যায়ে ২০ টাকা পাইকারি ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা, পাইকারি ২০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা, শিম কৃষক পর্যায়ে ২৫ টাকা পাইকারি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিঠাপুকুর উপজেলার বড়াইপাড়া এলাকার কৃষক জগদিস চন্দ্র রায় এবার দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাধাকপির চাষ করেছেন। জমি তৈরিসহ বীজ, সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে যে দামে পাইকাররা কিনে নিয়ে যান, তার দ্বিগুণ দামে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করে তারা। এতে আমরাও ন্যায্যমূল্য থেকে যেমন বঞ্চিত হই, সেই সঙ্গে ভোক্তারা চরা দামে সবজি কিনছেন। স্থানীয় পাইকাররা কৃষকের ক্ষেত থেকে লাউ সংগ্রহ করে ট্রাকে তোলার জন্য স্তূপ করছিলেন রানীপুকুর এলাকায়। এ সময় কৃষক সবুজ মিয়া, মনসুর আলী ও মনোরঞ্জন জানান, স্থানীয় পাইকাররা তাদের কাছ থেকে প্রতিটি লাউ কেনেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়। আর বাজারে গিয়ে সেই লাউ বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।