ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চায় বেদে সম্প্রদায়

সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চায় বেদে সম্প্রদায়

যাযাবর বেদেদের জীবন, নদীর কোল ঘেঁষে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন আর ছেঁড়া কাপড়ের তাঁবু বানিয়ে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে অভ্যস্ত বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ। বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বলে- আমরাও মানুষ, আমরা সবাই মুসলমান, সাধারণ মানুষরা আমাদের খোটা দেয়। তাই এ পেশা ছেড়ে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়। গত ১ বছর আগে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর ও ফরিদপুর জেলা থেকে আসা ১০০টি বেদে পরিবার অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে আছে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার দমদমা ব্রিজের নিচে অবস্থিত ঘাঘট নদীর তীরে। তারা সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চায়। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা জীবীকার তাগিদে বছরের অর্ধেক সময়ই নৌকা নিয়ে ছুটে বেড়ায় দেশের নানা প্রান্তে। সাপ খেলা ও তাবিজ বিক্রিই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। এ আয় দিয়ে সংসার চালাতে হয় তাদের। তাঁবু টানিয়ে বসবাস করেন বেদে সম্প্রদায়ের মানুষরা। সরেজমিন দেখা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ঘাঘট নদীর তীর। প্রচণ্ড শীত কুয়াশাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এভাবেই খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে ভাসমান বেদেদের বসবাস। অনেকটা অনিরাপদ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়েই যুগের পর যুগ চলছে বেদে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা। মৌলিক অধিকারের অনেক কিছুই অধরা এই সম্প্রদায়ের কাছে। অথচ তারা এই দেশেরই নাগরিক। বেদে পরিবারের একজন পার্থ সর্দার বলেন, আমি সাপ ধরে বিক্রি করি, এটাই আমার পেশা, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ঘুরে এই কাজ করি। আমার পরিবারে ৮ জন সদস্য আছে। ছোট শিশু রয়েছে দুইজন বিভিন্ন জায়গায় থাকার কারণে তাদের পড়াশোনা করাতে পারি না। আর কোথাও গেলে মানুষ আমাদের ভালো চোখে দেখে না এটাও একটা কারণ।

তাই আমি চাই সবাই আমাদের মানুষ ভাবুক। সেখানকার বাসিন্দা শিউলী ও শেফালী বলেন, আমরা কোরবানি ঈদ আসলে এক বছর হবে এখানে অবস্থান করছি। গত বছর আমরা চাল, ডাল, তেল কম্বলসহ বিভিন্ন সামগ্রী পেয়েছিলাম এবার এখন পর্যন্ত পাতলা কম্বল ছাড়া কিছু পেলাম না। আমরা সবার কাছে উপহাসের পাত্র। আমরা এভাবে থাকতে চাই না। অস্থায়ীভাবে বসবাস করা বেদে সম্প্রদায়ের বাসিন্দা ফুলমতি বেগম বলেন, আমরা ৪ মাস আগে রংপুরে এসেছি, নদীর তীরে স্রোতের মতো এভাবেই চলছে আমাদের জীবন-জীবিকা। সিংগা লাগাই, পোকা উঠাই ও মাচা কমর টানি। এভাবেই চলতে হয়, খুব কষ্ট আমাদের। বাড়ি নাই ঘর নাই এভাবেই পলিথিন দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে থাকি। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা করাতে পারিনি অনেক কষ্টে আছি ভাই। আরেক অস্থায়ী বেদে পল্লির বাসিন্দা জোনাকি রানী বলেন, আমরা চাই আমাদের ছেলে-মেয়ে নিরাপদে থাকুক। আমরা যেমন ঘুরে বেড়াই আমরা কি চাই আমাদের শিশুরা এভাবে ঘুরে বেড়াক।

আমরা কখনো চাই না। আমাদের শিশুদেরও একটা ভবিষ্যৎ আছে। সারা জীবন এই কাজ করলে কি আমাদের চলবে ভাই। আমরা সরকারের কাছ থেকে কামনা করি, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভালো করে পড়াশুনা করুক এবং আমরা ভালো থাকতে চাই। রংপুরের গবেষক উমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশের বেদে গোষ্ঠী বা যাযাবর শ্রেণির যারা আমাদের এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেনি। এখনো তাদের জীবনমান বঞ্চিত অবহেলিত। এসব সুবিধা বঞ্চিত, অধিকার বঞ্চিত অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে আমরা সরকারের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে যদি তাদের সম্পৃক্ত করতে না পারি, তাদের স্থায়ী নিবাস ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমাদের পুরো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান বলেন, এই বেদে জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নের জন্য নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। তাদের আমরা উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি, এটা একটি চ্যালেঞ্জ। আজকে যদি আমরা তাদের কোনো প্রেশার দেই তাহলে তারা অন্য জায়গায় চলে যাবে। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত