খুলনায় বারি ১৯ জাতের সরিষায় বাম্পার ফলন

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফকির শহিদুল ইসলাম, খুলনা

চলতি রবি মৌসুমে খুলনাঞ্চলের প্রায় ৭০০ বিঘা ঘেরের পতিত নরম মাটির জমিতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনা পাইলট উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় লবণ সহনশীল বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভরতা কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে।

তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগ দৌলতপুর খুলনার পাইলট প্রদর্শনী প্লটের পাশাপাশী ঘেরের কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বিনা মূল্যে সার, বিজ ও জমি তৈরিতে আর্থিক সহায়তায় দিয়ে উপকূলের লবণাক্ত এলাকায় বারি ১৯ জাতের সরিষার আবাদ সম্প্রসারণ করছে। সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনা পাইলট উৎপাদন কর্মসূচির ২৩-২৪ অর্থ বছরে পার্টনার প্রকল্প থেকে বারি সরিষা ১৪, বারি সরিষা ১৭, সরিষা ১৮,সরিষা ১৯ জাতের প্রায় ৭০০ বিঘা ঘেরের পতিত জমিতে চাষ করা হয়। এ সরিষার আবাদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার লবণাক্ত ঘেরে। বারি ১৯ জাতের সরিষা ভালো ফলন এবং লবন সহনশীল জাত। এই জাতের সরিষার উৎপাদন বিঘা প্রতি ৮ থেকে ৯ মণ। বেশি ফলনের আশায় ব্যাপক হারে বারি ১৯ জাতের সরিষার অবাদ করছে স্থানীয় কৃষকরা। প্রথমবার এই নতুন জাত পেয়ে কৃষক ধারণা করছে প্রায় ৮ থেকে ৯ মণ ফলন হতে পারে। বিনা চাষে শুধু কাদা-কাদা নরম জমিতে সার বীজ ও শ্রমিক বাবদ বিঘা প্রতি খরচ ৪ হাজার টাকা। আর প্রতিবিঘায় সরিষার উৎপান ৮ মণ হিসেবে প্রতি মণ সরিষা ৩ হাজার টাকা বিক্রি করলে বিঘাপ্রতি কৃষকের আয় খরচবাদে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এই সময় বোরো ধান চাষ করলে বিঘা প্রতি একজন কৃষক চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বেশি লাভবান হন না, তাই চলতি রবি মৌসুমে ঘেরের কৃষকরা লবণ সহনশীল বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদে ঝুঁকে পড়ছেন।

সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনা সূত্র জানায়, পাইলট উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পার্টনার প্রকল্প থেকে বারি সরিষা-১৮, বারি সরিষা-১৯ জাতের ৭০০ বিঘা জমিতে চাষ হয়। যা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প জীবনকাল বারি সরিষা-১৪ ও ১৭ এবং দীর্ঘ জীবনকাল জাত বারি সরিষা-১৮-১৯। সরিষার জাতগুলোর মধ্যে বারি সরিষা-১৯ একটি লবণ সহনশীল জাত। যার জীবনকাল ১০৫ দিন তবে সরিষার ফলন বিঘা প্রতি প্রায় ৯ মণ। রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ঘেরগুলোতে পানি স্থায়িত্ব পায় এবং বোরো ধানের চাষ করে।

সরজমিন বিভাগ চলতি বছর সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় কৃষক নাজমুল শাহাদাত ১০ বিঘা ঘেরে প্রথমবারের মতো বারি সরিষা- ১৯ চাষ হয়। সরজমিন গবেষণা বিভাগ থেকে পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে সার ও বীজ দেওয়া হয়। প্রথমবার এই নতুন জাত পেয়ে কৃষক ধারণা করছে প্রায় ৮ মণ ফলন হতে পারে।

বিনা চাষে শুধু কাদা-কাদা নরম জমিতে সার বীজ বাবদ খরচ কম হওয়ায় তাদের ঘেরে বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদ করছেন। কৃষক নাজমুল শাহাদাতে ঘেরে সরিষার আবাদ দেখে আশপাশের কৃষকরা তার কাছে বীজ চাচ্ছে। তারা আগামীতে তাদের ঘেরে রবি মৌসুমে লাভজনক বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদ করবেন। দক্ষিণাঞ্চলের ঘেরগুলোতে সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন কৃষকরা। দেবহাটার কৃষক নাজমুল শাহাদাত বলেন, অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ার চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও হয়েছে বেশ।

সরিষার বর্তমান বাজারদর পায় মণ প্রায় ৩ হাজার টাকা। আরো বলেন, রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বিক্রি করতে পারলে সরিষার বাজার দর আরো বেশি পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগ দৌলতপুর খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন তেল জাতীয় ফসলগুলো গবেষণার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ের অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সঙ্গে কাজ করছেন।