মোহাম্মদপুরে ‘দে ধাক্কা’ কিশোর গ্যাং চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার পাঁচ
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ‘ডায়মন্ড’ এবং ‘দে ধাক্কা’ কিশোর গ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতা জুলফিকার আলীসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব-৩ এর একটি দল শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে আদাবর থানাধীন মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন জুলফিকার আলীর সহযোগী হারুন অর রশিদ (৩৮), শামছুদ্দিন বেপারী (৪৮), কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮), ও সুরুজ মিয়া (৩৯)। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলির র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, র্যাব-৩ এর একটি দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, মোহাম্মদপুর এলাকায় কতিপয় কিশোরগ্যাং সদস্য দীর্ঘদিন ধরে মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন, এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশকিছু কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে জুলফিকারের নেতৃত্বে এবং অপর আসামিদের সহযোগিতায় ‘ডায়মন্ড’ এবং ‘দে ধাক্কা’ নামে দুটি কিশোর গ্যাং পরিচালিত হতো। এলাকার বেশকিছু বেপরোয়া ও মাদকসেবী কিশোরদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনার মাধ্যমে এলাকায় অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি ও ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। জুলফিকারের কিশোর গ্যাং পরিচালনা করার জন্য হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। জুলফিকার মূলত ‘ডায়মন্ড’ এবং ‘দে ধাক্কা’ গ্রুপের কিশোর গ্যাংদের কাছে দেশি-বিদেশি পিস্তল ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিশোর গ্যাংকে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের দ্বারা দলবদ্ধভাবে মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। ‘ডায়মন্ড’ এবং ‘দে ধাক্কা’ দুটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও বাস যাত্রীদের টার্গেট করে তাদের ব্যাগ/পার্টস, মোবাইল ছিনতাই করে থাকে। র্যাব-৩ অধিনায়ক আরো জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জুড়ে তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ‘ডায়মন্ড’ এবং ‘দে ধাক্কা’ দুটি কিশোরগ্যাংয়ের তৎপরতায় প্রতিনিয়ত তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে বিরোধী অন্যান্য গ্যাংসমূহের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ত। খুবই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করত। এসব ঘটনায় তারা হরহামেশাই যে কাউকে গুলিবিদ্ধ, কুপিয়ে জখম, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করে না। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে এ কর্মকর্তা আরো জানান, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় ইত্যাদি এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের মহড়া পরিচালনা করত। তাদের তৎপরতায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা এসব এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নিজেদের প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে সাধারণ পথচারীদের পথরোধের মাধ্যমে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত।