মাছের খাদ্যের দাম বাড়ায় বাজারদর নিয়ে বিপাকে চাষি
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
মাছের খাদ্যের দাম বাড়লেও সে অনুযায়ী বাজারদর না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মাছচাষিরা। এতে উত্তর চট্টগ্রামের মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিত মুহুরী মৎস্য প্রকল্পের চাষিরা হতাশায় দিন পার করছেন। তাদের দাবি, বিদেশ থেকে মৎস্য খাদ্যের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাবে দেশে উৎপাদনে খরচ বাড়ছে। দ্রুত সরকারকে মানসম্মত মৎস্য খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার আহ্বান চাষিদের।
মাছচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ৩ হাজার মাছচাষি রয়েছেন। কিছুদিন পর পর ফিড কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও সে তুলনায় মাছের দাম বাড়ছে না। গত ২ বছরে প্রতি কেজি ফিডে প্রকারভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। এছাড়া অজানা ভাইরাসে লাখ লাখ টাকার মাছ মরে যাচ্ছে। সঠিক রোগ নির্ণয় না হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ফিড উৎপাদনের উপাদান ভুট্টা, গম, সয়াবিনসহ সব ধরনের কাঁচামালের সংকট রয়েছে। আর এসব কাঁচামালের বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সয়ামিল রপ্তানি চালু রাখা ও গম আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাবে ফিডের কাঁচামালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে সয়ামিলের দাম ৪০ শতাংশ এবং ভুট্টার দাম ২৮ শতাংশ বেড়েছে। মাছচাষি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে মাছের ফিড ও মেডিসিনের দাম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মাছের দাম বাড়েনি। আমাদের থেকে কিনে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা। এছাড়া ফিডের মূল্য প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেকে মাছচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। প্রতি কেজি মাছে উৎপাদন খরচ যা পড়ছে অনেক সময় মাছ বিক্রি করে সে খরচ উঠছে না। তিনি আরো বলেন, এছাড়া মাছের সঠিক রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না। লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তাই উপজেলা ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে অনুরোধ করছি মাছের সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। একাধিক মাছচাষি জানান, ফিশ ফিডের দাম বেড়ে গেলেও তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মূল্য সেই তুলনায় বাড়েনি। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে তাদের জানিয়েছেন ফিশ ফিড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এই অবস্থা চলতে থাকলে এই সেক্টরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা দেখছেন তারা। মাছচাষি শাহ আলম বলেন, হঠাৎ করে বাজারে ফিশ ফিডের দাম বেড়ে গিয়েছে। এক মাস আগে ক্রি স্ট্যাটার আইটেমের ফিশ ফিডের দাম ছিল টন প্রতি ৮০ হাজার টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার টাকায়। গ্রোয়ার আইটেমের ফিশ ফিডের দাম ছিল টন প্রতি ৫৮ হাজার টাকা। সেটি বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রায় ২০টি আইটেমের ফিশ ফিডের প্রতিটিরই দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষির পুরস্কার পাওয়া আনোয়ার অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে দফায় দফায় মাছের খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সবশেষ গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টনে ৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছচাষে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ফিডের দাম বাড়ছে ঠিক আছে, কিন্তু মাছের দামও আগে থেকে বেড়েছে। বাজারে গেলে বোঝা যাবে আগের তুলনায় দাম বেড়েছে কিনা। তিনি আরো বলেন, পোলট্রি ও ডেইরিতে সহজে রোগ নির্ণয় করে যেভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় মাছের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। তাই মাছের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই চাষিদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এছাড়া আমাদের লোকবল সংকট, উপজেলায় পরীক্ষার জন্য ল্যাব না থাকায় সহজে রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম জেলার প্রায় ৭৫ ভাগ চাষকৃত মাছের চাহিদা পূরণ করা হয় মুহুরী চরের শত শত মৎস্য প্রকল্প থেকে। এভাবে মাছচাষের মাধ্যমে বদলে গেছে অনেক বেকার যুবকের ভাগ্যের চাকা। ১৯৮৪ সালে সরকার ফেনী নদীর মিরসরাই অংশে প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধ নির্মাণের পর প্রায় ৫০ হাজার একরেরও অধিক জমি জেগে উঠেছে উপকূলীয় বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। সেই চরে গড়ে উঠেছে শত শত একর মৎস্য প্রকল্প।