রংপুর অঞ্চলে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ

* সরকারি প্রণোদনা * অনুকূল আবহাওয়া হওয়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন * দাম দ্বিগুণ হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন, দাম দ্বিগুণ হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। গত বছর একরে ৯০ থেকে ১১০ মণ ভুট্টার ফলন আশা করেছিলেন কৃষকরা। রবি ও খরিপ ২ মওসুমেই বছরে ২ বার কৃষকরা ভুট্টার আবাদ করে থাকেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। রংপুর জেলায় ২১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে, গাইবান্ধা জেরায় ১৭ হাজার ৭০৬ হেক্টরে কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬ হাজার ৭৫৫ হেক্টরে, লালমনিরহাট জেলায় ৩২ হাজার ৯১০, নীলফামরিী জেরায় ২৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে চলতি রবি মওসুমে কৃষক ভুট্টা আবাদ করেছে কৃষক। আর চলতি খরিপ মৌসুমে ১০ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের ভুট্টা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন। মিঠাপুকুর উপজেলার ১৬ নং মির্জাপুর ই্উনিয়নের ভুট্টাচাষী মো: খাইরুজ্জামান জানান, গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো পেয়েছেন। তিনি আশা করছেন এ বছর এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ১০০ মণ পাবেন। ওই এলাকার বর্গাচাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ৪৪ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন। আশা রাখছেন ফলন ভালো হয়েছে। দাম ভালো পাবেন। গতবছর আর এক বর্গাচাষি আরজুর মা ২৪ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করে ২০ মণ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ভুট্টাতে খরচ কম ফলন বেশি। তাই দাম বেশি পেয়েছেন।

জেলার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের তিস্তার চর ঘুরে দেখা গেছে, বালুচরে সবুজ আর সোনালী ফসলে ভরা। খেতগুলোতে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ ভুট্টা উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া বালুচরে রয়েছে বাদাম, ডাল, মরিচ, বেগুন, শিম, কপি, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা ফসলের সফল।

পীরগাছার তিস্তা চরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরে বালুচরে নানা জাতের ভুট্টা চাষ হলেও এ বছর তিস্তা সিড্স কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নতুন জাত ডালিয়া-৪৪৫৫ ও বাসুধা-১৬৫৫ চাষ বেশি হয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষিপ্রণোদনা ও অত্র উপজেলায় স্থানীয় সাংসদ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পরামর্শ ও নির্দেশনায় এবং কৃষি বিভাগের সব পর্যায়ের সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান ভুট্টা ফসল চাষে কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ভুট্টা থেকে মাছ ও মুরগির খাদ্য উৎপাদন এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি লাভজনক। এ মওসুমে উপজেলার ১৮ হাজার ২০০ কৃষককে প্রণোদনা আওতায় ধান, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও বিনামূল্যে সার সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৫০ জনকে ভুট্টার বীজ ও বিনামূল্যে সার বিতরণ করা হয়েছে। পীরগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ জাতটি নতুন। আমরা কৃষকদের নির্ভয়ে চাষ করতে অনুরোধ করেছি। কোনো ধরনের সমস্যা হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাসে তারা চাষ করে এখন লাভের মুখ দেখছেন। আসলে কৃষকদের মনে আস্থা আনাটাই বড় ব্যাপার।’ রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি বছর চলমান রবি মওসুমে রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত জেলার ৮টি উপজেলা ও মেট্রো এলাকায় ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ হেক্টর জমিতে রবি ভুট্টা চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি বিভাগের প্রণোদনার আওতায় উন্নতমানের ভুট্টার বীজ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণসহ মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারীদের সহযোগিতা ও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকায় জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলে অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, কৃষি সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় চলতি বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। রংপুরের ৫ জেলায় ও চরাঞ্চলে ভুট্টার চাষাবাদ প্রতি বছর বাড়ছে। এ বছর ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। এর মধ্যে তিস্তা নদী , ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া, ঘাঘট নদীর চরাঞ্চলে বিশেষ করে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলা বেষ্ঠিত এবং রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়ার তিস্তার চর ও চর বেষ্টিত এবং তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ এলাকায় করতোয়া ও ঘাঘট নদীর চরাঞ্চলে প্রচুর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। তিনি আরো অন্যান্য বছরের দাম বেশি পাওয়ায় অনুকূল আবহাওয়া হওয়ায় কৃষক ভুট্টা চাষ প্রচুর করেছে।