উপকরণের চড়া দাম

বিপাকে বেকারি ব্যবসায়ীরা

কমানো হয়েছে পণ্যের ওজন-আকার

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. সাইফ আহমেদ সনি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে বেকারি পণ্যে। এ কারণে পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর, মোরব্বা, কেকসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ায় কমেছে বেচাকেনা। কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছে না বেকারি ব্যবসায়ীরা। বেকারি পণ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম না কমালে পণ্যের দাম সমন্বয় করা কঠিন। এছাড়া পবিত্র রমজানের আগে চিনি আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো হবে, এমন সংবাদে বাজারে পণ্যটির দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু শুল্ক হার ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ায় চিনির দাম না কমে বরং উল্টো এখন বাড়তে শুরু করেছে। মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, রোজার আগে চিনির চাহিদা বাড়ে। তাতে দামও একটু বাড়তি হয়। অন্যান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও চড়া দাম দেখা যাচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর রিকশাচালক রফিকুল আলম পাঁচ টাকার একটি পাউরুটি আর চা দিয়েই নাস্তার কাজ মেটাতেন। তবে এখন সেই রুটি ১০ টাকায় কিনছেন। কেবল ফুটপাতের দোকানই নয়, পাড়ার মুদির দোকানেও পাউরুটি বিস্কুট, কেক, রোল কিংবা বন রুটির দাম বেড়েছে। গুলিস্তান সুন্দরবন মার্কেটের সামনে কথা হয় লেগুনা চালক ফরিদের সাথে। ফরিদ বলেন, ‘একটা সময় গাড়ি চালানোর ফাঁকে টং দোকানে এক কাপ চা, বিস্কুট ও বনরুটি খেতে ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হতো, কিন্তু এখন একটা বন কিংবা বাটার বন কিনতে সেই টাকা চলে যাচ্ছে। তার ওপর সব জিনিসের দাম বাড়তি। সবক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা টাইট।’ রাজধানীর ধোলাইপাড় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরিক্ষা দিচ্ছেন মেহজাবিন লামিয়া। তিনি বলেন, আগে একটা কেক খেয়ে পানি পান করলে খিদে মিটত। কিন্তু এখন কেকের আকার এতো ছোট হয়ে গেছে যে, দুইটা খেলেও আগের একটা কেকের সমান।

তাই কেকের দাম ঠিক থাকলেও ওজন ও আকারে অনেক কমানো হয়েছে। তার সাথে থাকা অভিভাবক নাসিমা বেগম বলেন, আগে বাচ্চাকে টিফিনের জন্য একটি মাফিন কেক দিলে হতো। এক পিস কেক ছিল ৫ টাকা। গত ৬ মাস ধরে ২টি মাফিন কেক দেওয়া লাগে। দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আকারে ছোট হয়েছে কেক। দফায় দফায় উপকরণের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে। বেড়ে গেছে বেকারিজাত সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। আগের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন বেকারি ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, বাটারবন, ড্যানিশ ও প্যাটিস কিনে খান কর্মজীবী মানুষ ও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। সব ধরনের বেকারি পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন উৎপাদনকারীরা। দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। মীরহাজিরবাগ এলাকার দোকানদার রনি মিয়া জানান, ‘রিকশা, ভ্যান, খেটে-খাওয়া মানুষ তাদের মূল কাস্টমার। দাম বাড়ার কারণে তারা এখন চাহিদা থাকলেও কম খাচ্ছে। তাছাড়া আগে বেকারি পণ্য বিক্রি করে সরবরাহকারীকে টাকা দিতাম।

এখন বেশিরভাগ সময়ই সেই টাকা নগদ দিতে হচ্ছে। আগে যে কেক ৫ টাকায় বিক্রি হতো, এখনও সেটার সেস্ট আগের মত থাকলেও সাইজ ছোট হয়ে গেছে। প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফয়সাল মোরব্বা ও লাচ্চা সেমাই ঘরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দাম বাড়ায় চাহিদা আগের থেকে কমেছে।

তাছাড়া শ্রমিকদের বেতন ভাতা উৎপাদন খরচ সব মিলিয়ে সমান সমান চলছে। বেকারি সংশ্লিষ্টরা জানান, বেকারি পণ্যের উপকরণের মধ্যে রয়েছে ডিম, আটা, ময়দা, চিনি, তেল, ঘি। সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎ গ্যাসসহ অন্যান্য খরচ। বেকারি শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। সব মিলিয়ে বেকারি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা। কয়েকটি বেকারি পণ্যের মূল্য যাচাই করে দেখা গেছে, মানভেদে ৫ থেকে ৭ টাকার এক পিস বনরুটি বর্তমানে ১০ থেকে ২০ টাকা, ২ থেকে ৩ টাকার বিস্কুটের পিস এখন ৫ টাকা, ১০ টাকার বাটারবনের পিস আকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।