দখল হয়ে যাচ্ছে রংপুর নগরীর খোকসা ঘাঘট

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

নদীর পাড় দখল করে কেউ গড়ে তুলছেন স্থাপনা। কোথাও আবাদ হচ্ছে আবার কোথাও কোথাও ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। সব মিলিয়ে রংপুর নগরীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া খোকসা ঘাঘট নদী দখলে দূষণে এখন বেহাল। খোকসা ঘাঘট মরে গেলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা এবং জলাবদ্ধতায় লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। এক সময়ে চলত নৌকা এখন অনেকটা খালে পরিণত হয়েছে। এ নদীতে আবাদ হচ্ছে। এর বুকে গজিয়েছে ঘাস। মাঝখানে সামান্য পানি। অনেকের শৌচাগারের পাইপ এই নদীতে নামছে। বিভিন্ন সময় সংস্কারের কথা ওঠে আসে। পরে আর কার্যকর হয় না। খোকসা ঘাঘট দখল ও দূষণে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে- বলছেন স্থানীয়রা। তারা আরো জানান, নগরীর সব পানি শ্যামাসুন্দরীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খোকসা ঘাঘটে পড়ে। আস্তে আস্তে খোকসা ঘাঘট ভরাট হয়ে আসছে। সহজে পানি না নামায় বর্ষাকালে বন্যা দেখা দেয়। খোকসা ঘাঘট মরে গেলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা এবং জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহাবুবার রহমান মনজু বলেন- নগরীর প্রাণকেন্দ্রের শ্যামাসুন্দরী খালের ডিজিটাল ম্যাপ হয়েছে। এই খাল বাঁচাতে উচ্ছেদসহ সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। শ্যামাসুন্দরী বাঁচলে খোকসা ঘাঘট বাঁচবে। রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ বলেন- সিএস রেকর্ড মূলে খোকসা ঘাঘট নদী এখনো প্রবহমান। দখল ও দূষণে কবলে পড়ে জরাজীর্ণ খোকসা ঘাঘটের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অস্তিত্ব বিলীনের পথে। এই অধ্যাপক বলেন, এই খোকসা ঘাঘটের সীমানা মাপাও হয়েছে। সীমানার ভেতরে কেউ কোনো স্থাপনা গড়ে তুললে তা অপরাধ। যারা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নদী রক্ষা করা যাদের দায়িত্ব তারা যদি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতো তাহলে আজ খোকসা ঘাঘটের এ অবস্থা হতো না। এ খোকসা ঘাঘট খনন অব্যাহত রাখতে হবে। নগরীর ফুসফুস হলো শ্যামাসুন্দরী। নগরীর প্রাণকেন্দ্রের শ্যামাসুন্দরী বাঁচলে খোকসা ঘাঘট বাঁচবে বলেও জানান এই অধ্যাপক। জানা যায়, এই খোকসা ঘাঘট বাঁচাতে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর খোকসা ঘাঘট নদ বাঁচানোর দাবি জানিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ইকো সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করে। এই ক্যাম্পেইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করে। আর ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) রিভারাইন পিপল ক্লাব খোকসা ঘাঘট নদীর স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট সংলগ্ন খোকসা ঘাঘট পাড়ে এ করা হয়। এ সময় সেখানে খোকসা ঘাঘটের আত্মরক্ষার সাইনবোর্ড দেয়া হয়। সাইনবোর্ডে লেখা আছে- আমি খোকসা ঘাঘট নদী। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আমাকে তালিকাভুক্ত করেনি। আমার মতো বাদ পড়া শত শত নদীর পাশে দাঁড়াও। সেইদিন বক্তব্য রাখেন- ছাওমুন পাটোয়ারী সুপ্ত, ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ, অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম, মিরাজুল ইসলাম মিরাজ।