ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ

দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ

দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি মোট শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি সেক্টরে ৩৮ হাজার আট শিশু কাজ করছে, যার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশই ছেলে শিশু।

গতকাল বৃহস্পতিবার সেক্টর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশু শ্রম জরিপ ইএসডাব্লিউসিএস ২০২৩ এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই জরিপ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের মোট সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু কর্মে নিয়োজিত, ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭ জন শিশুশ্রমে এবং ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করছে। জরিপে বলা হয়, দেশের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরো বলেছে, পাঁচটি খাতে ৩৮ হাজার আটজন শিশু কাজ করছেন, যার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশই ছেলে শিশু। সবচেয়ে বেশি কাজ করে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে। বিবিএস বলছে, বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি সেক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, বিবিএস সরকার ঘোষিত এই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ পরিচালনার জন্য পাঁচটি খাত নির্বাচন করেছে। এই সেক্টরগুলোকে ফোকাস করে, শিশুশ্রম বিরাজমান রয়েছে এবং জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। এই নির্বাচিত সেক্টরগুলো ১) মাছ, কাঁকড়া, শামুক/ঝিনুক সংক্ষরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (শুটকি মাছ উৎপাদন), ২) জুতা উৎপাদন (চামড়ার তৈরি জুতা শিল্প), ৩) লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েন্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ), ৪) মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ৫) ব্যক্তিগত এবং গৃহস্থালি সামগ্রীর মেরামত (অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং এবং পোশাক সেক্টর)। জরিপের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠান এবং ৩৮ হাজার ৮ জন ৫-১৭ বছর বয়সী শিশু উপরোক্ত সেক্টরগুলোতে কর্মরত আছে।

ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কাজে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছেলে এবং ২ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ে শিশু। এই ৫ টি সেক্টরে শ্রমজীবী মোট শিশুর সংখ্যা হলো যথাক্রমে শুটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮, চামড়ার তৈরি জুতা তৈরিতে ৫, ২৮১টি, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার ম্যাকানিকের কাজে ৪, ০৯৯, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে ২৪, ৯২৩ এবং অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২, ৮০৫ জন। এ থেকে স্পষ্ট যে, ০৫টি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে অটোমোবাইল খাতে। পল্লী ও শহর বিবেচনায় এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ পল্লী এবং ৬৪.৩% শহর এলাকায় বসবাস করে। এ জরিপের মাধ্যমে একটি শ্রমজীবী শিশু ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরসমূহে কাজ করার সময় কি কি ধরনের বিপজ্জনক কাজ করতে পারে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। আনুমানিক ১৯.১% ছেলে এবং ৭.৭% মেয়ে শিশু ভারী বোঝা বহন, মালামাল টানার কাজে, অধিক উপরে বা ফ্লোর হতে অতি উচ্চতায় উঠে কাজ করে প্রায় ৮.১% ছেলে এবং ০.৩% মেয়ে শিশু। আইএলও’র সহযোগিতায় বিবিএস বাংলাদেশে তার নিজস্ব প্যাটার্নে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ জরিপে পাঁচটি (০৫) ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে নিযুক্ত ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের একটি জাতীয় প্রাক্কলন মূল্যায়ন করে। এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত। এ জরিপটি নির্বাচিত পাঁচটি সেক্টরে নিয়োজিত শিশুদের কাজের প্রকৃতি এবং শিশুদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরে। জরিপ প্রতিবেদনটি এই সেক্টর সমূহের শ্রমজীবী শিশুদের জীবনের বিভিন্ন দিক যেমন পারিবারিক বৈশিষ্ট্য, আর্থসামাজিক বৈশিষ্ট্য এবং কর্মসংস্থান সম্পর্কিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। এদিকে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, আমরা শিশু শ্রম নির্মূলে কাজ করছি। ২০২৫ সালে শিশু শ্রম শূন্যতে আনতে পারবো বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত