ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদ সামনে রেখে চাঙা ইসলামপুর পাইকারি কাপড়ের বাজার

ঈদ সামনে রেখে চাঙা ইসলামপুর পাইকারি কাপড়ের বাজার

শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। এক মাস রোজা রাখার পর আসবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎসবে নতুন পোশাকে সাজবে মুসলিমরা। এজন্য এখন থেকেই ঈদুল ফিতরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন পাইকাররা। ঈদকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ বেচাকেনার পরিকল্পনা করছেন তারা। দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুরে। সেখানে বইছে বেচাকেনার ধুম। সালোয়ার কামিজ, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি ও বোরকার নানা ডিজাইনের কাপড় পাওয়া যায় এখানে। রয়েছে দেশি-বিদেশি খ্যাত-অখ্যাত ব্র্যান্ডের কাপড়ও। বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড় দেশি-বিদেশি শার্ট প্যান্ট ও গজ কাপড় সারি সারি করে রাখা হয়েছে। গত কয়েকদিন ঘুরে দেখা যায়, মালামাল বিক্রিতে ব্যস্ত দোকানি ও কর্মীরা। কেউবা কাপড় দেখাচ্ছেন, কেউ কেউ করছেন দরদাম। এক ক্রেতাকে দেখানো শেষ হলেও অন্য ক্রেতাকে কাপড় দেখাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তাই ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ইসলামপুর এখন জমজমাট। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দেশি কাপড়ের বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ এবং বিদেশি কাপড়ের বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশই পূরণ করে থাকে ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা। ইসলামপুরে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় মার্কেট। তার মধ্যে অন্যতম চায়না মার্কেট, এসি মার্কেট, লায়ন টাওয়ার, ইসলামপুর প্লাজা, জাহাঙ্গীর টাওয়ার, দৌলত কমপ্লেক্স, রয়েল টাওয়ার, হায়াত-দৌলত শপিংমল, আইসিটিটি টাওয়ার, জেফসেল মার্কেট, কেহাবুল্লাহ মার্কেট, মনসুর মার্কেট, হামিদ ম্যানশন ইত্যাদি। এ বছর মানভেদে দেশি কাপড়ের থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। দেশির কাপড়ের মধ্যে সুতার থ্রি পিসের দাম বেশি। এছাড়া বাটিক, বুটিক্স, জয়পুরী, নায়রা, মুসলিম কটন, ডিজিটাল প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, জরজেটসহ বিভিন্ন রকমের থ্রি-পিস রয়েছে। একটি জয়পুরী থ্রি-পিস মানভেদে ৫০০ থেকে ৬৫০ পর্যন্ত রয়েছে। প্রিন্টের থ্রি পিস ৪৫০ থেকে শুরু ১৫০০ পর্যন্ত রয়েছে। বুটিক্স, মুসলিম কটন রয়েছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা। এমব্রয়ডারি পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। পপলিন কাপড় বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা দামে। বিদেশি চায়না ও ইনডিয়ান কাপড়ের মধ্যে মানভেদে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত গজ রয়েছে। এছাড়া এবার ক্রেতাদের পছন্দ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইনডিয়ান থ্রি-পিস। ইসলামপুরে ১৬০০ থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকার পর্যন্ত থ্রি পিস রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে শার্ট ও প্যান্টের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস শার্টের কাপড় মানভেদে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। শার্ট প্যান্টের কাপড়ের মধ্যে রয়েছে ফাইন কটন, লিলেন কাপড়, অক্সফোর্ড ফেব্রিক, পপলিন ফেব্রিক কাপড়ের প্যান্ট শার্ট। ঈদ উপলক্ষ্যে পাকিজা, বি প্লাস, স্ট্যান্ডার্ডসহ বিভিন্ন দেশি ব্র্যান্ডের শাড়ি রয়েছে। মানভেদে এসব শাড়ি ৭০০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত রয়েছে। লুঙ্গি রয়েছে সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এই বছর পাইকারি প্রতিটি কাপড়ে ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে জামা-কাপড়ের দামও বেড়েছে। প্রতিটি থ্রি-পিস গতবারের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিদেশি গজ কাপড়ের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদকে লক্ষ্য করে দুইধাপে বেচাকেনা হয়। শবেবরাতের পর থেকে রমজান পর্যন্ত প্রথম ধাপে বেচাকেনা হয়। ৭ রমজানের পর থেকে ১৫ রমজান পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে বেচাকেনা হয়। এরপর থেকে ঈদ পর্যন্ত পাইকারি পর্যায়ে ইসলামপুরে তেমন বেচাকেনা থাকে না। রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তি উন্মাদনা দেখা গেছে এসব পাইকারি মার্কেটগুলোতে। সকাল থেকে হাঁক-ডাক দিয়ে শুরু হয় বেচাকেনা। ঢাকার আশপাশ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত খুচরা ব্যবসায়ীরা দোকানের জন্য পছন্দমতো জামা-কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামপুরে জাহাঙ্গীর টাওয়ারের নিচে কথা হয় নোয়াখালীর খুচরা ব্যবসায়ী আবুল বাশারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার থ্রি পিস, থান কাপড়ের দাম বেড়েছে। ইন্ডিয়ান অরবিন্দ কাপড়ের কাটা কাপড় ও থ্রি পিসের দামও এবার ভালোই বাড়তি। মোটামুটি মানের শাড়ি ৭০০-৮০০-এর নিচে নাই।

এদিকে দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। এসটেক্স ফ্যাশনের ম্যানেজার মো. শহিদ বলেন, সুতি জিনিসের দাম বেড়েছে। এছাড়া রঙের দাম, কারিগরের খরচও বেশি। বিদেশি কাপড়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট, ট্যাক্স আর ক্যারিং খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা দাম বেড়েছে। সুলতান ফ্যাশনের মনির হোসেন বলেন, ঈদ মৌসুমের আগে বেচাকেনা ভালো হয়নি। তবে ঈদ উপলক্ষে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছি, প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা হচ্ছে না। অন্যান্য বছর দিনে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকাও বিক্রি করেছি। এবার খুচরা বিক্রেতারা কম মাল কিনছে। এবার সব কিছুর দামই একটু বেশি যার ফলে মানুষ জামা-কাপড়ের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি মিজানুর রহমান বলেন, তিনমাস হলো বিদেশি কাপড় আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। থান কাপড়ে থি-পিসে ৩ ডলার থেকে ৩ ডলার ৭৫ সেন্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার। ফলে প্রতি গজ কাপড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বিক্রি করে খুচরা বাজারে গিয়ে দাম আরো বাড়ে। করোনার পর থেকে একের পর এক সংকট। এবছর অর্থনৈতিক সংকটে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত