চলছে পবিত্র রমজান মাস। রোজার শুরু থেকেই রাজধানীর অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর বিক্রি প্রায় বন্ধ। বিক্রি কমতে কমতে পৌঁছেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। ইফতার বিক্রি তাদের প্রধান ব্যবসাতে পরিণত হয়েছে। হোটেল বা রেস্তোরাঁর বাইরে বিক্রি হচ্ছে বাহারি ইফতার। কিন্তু মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে এসব ইফতার। গতকাল রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আরো দেখা গেছে, তেলে ভাজা বা চিনির তৈরি এসব বাহারি ইফতার ব্যস্ত সড়কের ধারে খোলা বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার ধূলাবালিসহ ময়লা উড়ে পড়ছে ইফতারে। এ বিষয়ে সচেতনতা যেমন মালিক-কর্মচারীদের নেই, নেই গ্রাহকদেরও। ইফতারের সময় এসেছে তাই কিনছেন এসব খাদ্যপণ্য। হোটেল মালিক বা দোকান কর্মচারী কোনোভাবে কাগজের প্যাকেটে ইফতারি রোজাদারে হাতে দিতে পারলেই দায়িত্ব শেষ। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। তারপরও রোজাদাররাও লাইন ধরে এসব ইফতারি কিনছেন। মিরপুর ২ নম্বর মোড়ে কথা হয়, রোজদার রনির সঙ্গে। তিনিসহ খোলা ইফতার অনেকে লাইন ধরে কিনছেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এভাবে ব্যস্ত সড়কের পাশে খোলা ইফতার কিনছেন, এতে ধুলাবালিসহ আবর্জনা এসে পড়ছে সেটা কি দেখছেন? এতে তো সুখও হতে পারে! ক্রেতা রনি কোনো কথা বলেন না। কয়েক সেকেন্ড পর মুচকি হেসে রনি বলেন, সবাই কিনছে তো তাই আমিও কিনছি। নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত তুলনামূলক কম আয়ের পেশাজীবী মানুষ রাস্তার ধারের খোলা এসব ইফতার কিনছেন। এসব ক্রেতাকে টার্গেট করে হোটেলগুলো চটকদার নানা স্বাদের ইফতার বিক্রি করছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মিরপুর-২ নম্বরে অবস্থিত পূর্ণিমা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের সঙ্গে। তিনি খুব ব্যস্ত ইফতারির দাম নিতে। ইফতার পণ্যের দামের রসিদ লিখতে লিখতে তিনি বলেন থাকেন, বলেন, বলেন, দ্রুত বলেন। সময় কম। আপনি তো সড়কের পাশে খোলা ইফতার বিক্রি করছেন। এগুলো তো ঢেকে রেখে বিক্রি করতে পারেন! এগুলো হাইজেনিক না।
এ কথা শুনে হোটেল ম্যানেজার লেখা বন্ধ করে কিছুটা থেমে বলেন, ও-ঢাকাই ছিল। এখন আবার ঢাকছি; বলেই চিৎকার করে কর্মচারীকে ইফতার ঢাকতে বলেন। পাশের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টেরও একই অবস্থা। হোটেলের বাইরে বাহারি পদের ইফতার মেলে বিক্রি করছে। এ হোটেলটিরও একই অবস্থা। মুরগির রোস্ট, হালিম, পেঁয়াজু, ডিম চপ, ছোলাসহ বিভিন্ন পদের খোলা ইফতার বিক্রি করছে। খোলা খাদ্য বিক্রি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর-এ বিষয়ে দোকানদার বা গ্রাহক কারোই ভ্রূক্ষেপ নেই। একই অবস্থা মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, ফার্মগেট, মগবাজারে দেখা যায়। মাঝারি মানের এসব হোটেলের মূল বেচাকেনা কমে যাওয়ায় দোকানের বাইরে এসব খোলা ইফতার বিক্রি করছে। তবে গলির ফুটপাতে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দেখা যায় পলিথিনে ইফতার ঢেকে বিক্রি করছে। বিষয়টি নিয়ে মিরপুরের কাজীপাড়ার চা বিক্রেতা আনসার আলীর সঙ্গে কথা হয়। রোজায় তারও চা বিক্রি কমে গেছে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তার ধারে আলুর চপ ও বেগুনি ভেজে বিক্রি করছেন। সঙ্গে মুড়ি ও ছোলাও রয়েছে।
তিনি বলেন, ইফতার ঢেকে রাখলে রাস্তার ধুলাবালি পড়বে না, ভালো থাকবে। তা না হলে খোলা ইফতার বিক্রি করলে, আর তা মানুষ খেলে মানুষের পেটের অসুখ হতে পারে। তবে আনসার আলীর মতো সবাই না, মিরপুর-১০ এ সেনপাড়া, শেওড়াপাড়া বা তালতলাতে রমজানের এসব খণ্ডকালীন ইফতার বিক্রেতা কোনো রকম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই ইফতার পণ্য তৈরি করছে এবং রাস্তার ধারে বিক্রি করছেন।