ঈদ উপলক্ষ্যে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও যাত্রী সংকটে ভুগছেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। ঈদকে সামনে রেখে কাঙ্ক্ষিত টিকিট বিক্রি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিবার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর দীর্ঘলাইন হলেও বর্তমানে সেই চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাউন্টারে কোনো যাত্রী নেই, নেই দীর্ঘ লাইন। এমন দুপুর বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট কাটতে আসা কোনো যাত্রীর দেখা পাওয়া যায়নি। কাউন্টারে বসে যাত্রীর খোঁজে অবসর সময় কাটাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে যাত্রী সংকটের কারণ হিসেবে রেলযাত্রা ও একাধিক রুটকে দায়ী করছে পরিবহন শ্রমিকরা।
শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার ওমারুল ইসলাম বলেন, ঈদের কোনো যাত্রীর চাপ নেই এখন পর্যন্ত। যদিও আমাদের গাড়ির অগ্রিম টিকিট সব কল্যাণপুর থেকে দিচ্ছে। তবে অনলাইনে দেখলাম এখন পর্যন্ত যাত্রীর কোনো চাপ নেই। গাবতলীতে অনেকেই টিকিট বিক্রির উপর কমিশন হিসেবে টাকা পাই। যাত্রী না থাকলে টিকিট বিক্রি না হলে এসব শ্রমিকদের ঈদ করা কষ্ট হয়ে যাবে। যাত্রী চাপ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ থেকে ট্রেনের টিকিট ছেড়েছে। অনেকে ট্রেনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাই ট্রেনের টিকিট কাটবে। যদি ট্রেনে টিকিট না পায় তখন বাসে যাবে। তাই কয়েকদিন না গেলে কিছুই বলা যাচ্ছে না, যাত্রী পাব কি পাব না। কর্মচারীদের দাবি, ট্রেনের যাত্রায় কোনো ভোগান্তি না থাকায় এবং বাসের টিকিটের দামের তুলনায় ট্রেনের টিকিটের দাম কম হওয়ায় মানুষ দূরপাল্লার যাত্রায় ট্রেনকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে দেখছেন। এস বি সুপার ডিলাক্সের কাউন্টার মাস্টার জিল্লু রহমান বলেন, আগে একটা সময় ঈদের অনেক আগে থেকেই গাবতলীতে মানুষ রাত জেগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত টিকিট কাটার জন্য। কিন্তু এখন টিকিট বিক্রির কোনো চাপই নেই। আজ পর্যন্ত যে কয়টা টিকিট বিক্রি হয়েছে কোনো গাড়িতেই ৭ থেকে ৮ জনের বেশি যাত্রী আমরা পাইনি এখনো। তবে ৮ এবং ৯ তারিখের কিছু যাত্রী পেয়েছি। এদিকে এখনো বেশ কিছু পরিবহনে দূরপাল্লার অগ্রিম টিকিট বিক্রি বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। শুভ বসুন্ধরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বলেন, যাত্রীর চাপ কম থাকায় আমাদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। আগামী ২৬ তারিখ তারপরে যেকোনো দিন আমাদের টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে।
সোহাগ পরিবহনের পরিবহন শ্রমিক বলেন, আমাদের মালিক পক্ষ থেকে এখনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর বিষয়ে কিছু জানায় নেই। তাই আমরা এখনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করি নেই। ২৬ তারিখ থেকে আমাদের শুরু হতে পারে। এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী বাসের ভাড়া নেওয়া হবে। ভাড়ার তালিকার বাইরে বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাবে না। সব বাস মালিকদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ জানান, যাত্রীরা যাতে বাসের অগ্রিম টিকিট সুশৃঙ্খলভাবে কাউন্টার থেকে কিনতে পারেন, সেজন্য বাস মালিকদের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম কাজ করবে। বাসের কোনো টিকিট কালোবাজারি হবে না। কারণ বাস মালিকদের মনিটরিং টিমের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনও কাজ করবে। এছাড়া প্রশাসনের গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমেও টিকিট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি রোধ করা হবে। এদিকে বাস কোম্পানিগুলো অনলাইনে টিকিট বিক্রির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বাসবিডি ডটকম ডট বিডি’ এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বাসের অগ্রিম টিকিট গত শুক্রবার থেকে অনলাইন মাধ্যমে দেওয়া হবে। ই-টিকিট কেনা যাত্রীদের জানানো হয়েছে, রাস্তায় সৃষ্ট জ্যামের কারণে ও গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে যাত্রার সময় পরিবর্তন হতে পারে। বিষয়টি জেনে টিকিট ক্রয় করতে বলা হচ্ছে।