দেশের বেশিরভাগ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। প্রতিদিনই তাপমাত্রা নতুন নতুন রেকর্ড করছে। সেই ধারাবাহিকতায় গতকালও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এমন অবস্থায় কড়া রোদ আর তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারা দেশের জনজীবন। বিশেষ করে জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষকে তীব্র দাবদাহের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রাজধানীতে বেশি বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালক, হকার আর নিম্ন আয়ের মানুষ। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে রোদণ্ডগরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, শাহবাগ ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায় রিকশাচালক ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ গাছের ছায়ায় বসে একটু প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন। যারা রাস্তায়-ফুটপাতে বসে চা-পান বিক্রি করেন তারাও রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে মাথায় ছাতা নিয়ে বসেছেন কিংবা কাপড় দিয়ে সামিয়ানা টানিয়েছেন। রিকশাচালকরা যাত্রী পেলে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন। গরমের কারণ দেখিয়ে ভাড়া চাইছেন বেশি।
হকারদের অনেককে মাথায় গামছা দিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। খাঁ-খাঁ রোদে সড়কগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক ফরিদ মিয়া বলেন, এমন রোদ আর গরম জীবনে দেখি নেই। বার বার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে কয়েক লিটার পানি খাইছি। একটা ট্রিপ মারার পর বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। এভাবে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারব না। এখন গ্যারেজে চলে যাব। রোদ কমলে বিকেলে কিংবা সন্ধ্যার দিকে আবার বের হবো। দাদন হাওলাদার নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, কয়েকদিন ধরেই অনেক গরম। একটু বৃষ্টি হলে শান্তি লাগত। আজ সকাল থেকে রোদের তীব্রতা অনেক বেশি। সঙ্গে অনেক গরমও লাগছে। তারপরও বাইর হইছি, ঘরে বসে থাকলে তো আর পেটে ভাত পড়বে না। তাপপ্রবাহে কষ্টে পড়েছেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরা। বেশ কয়েকজন জানালেন, রোদের কারণে মানুষ এখন মোটরসাইকেলে যেতে আগ্রহী নয়। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও কোনো ট্রিপ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যাত্রী পেলেও রোদে আসলেই অনেক কষ্ট হচ্ছে। হাসিব বিল্লাহ নামে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, সকাল থেকে মাত্র দুটি ট্রিপ পেয়েছি। একটি পান্থপথ থেকে মতিঝিল আরেকটি মতিঝিল থেকে নিউমার্কেট। প্রচণ্ড রোদ আর গরমে মানুষ বাইকে চড়তে চাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে গেছি। সন্ধ্যার পর বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই রোদে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাব নিশ্চিত। গরমের এ পরিস্থিতি সহসা স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম।
তিনি জানান, চলমান এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আজ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা কিংবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টিও হতে পারে।