রাজশাহীতে গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাজশাহী ব্যুরো

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। রাজশাহীতে বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি মাত্রায় বাড়তে শুরু করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরইমধ্যে রোগীর চাপে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীর জন্য শয্যা সংখ্যা সংকুলান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে মানুষের চলাচলরত রাস্তার মেঝেতে থাকছেন রোগীরা। গতকাল সকাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০, ২৪ ও ২৬নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, গরমে অনেক শিশু ডায়রিয়া, হাঁপানি, জ্বরে ভুগছেন। এছাড়াও হাসপাতালগুলোর আউটডোরে এসব রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪৭ জন গরমজনিত রোগী ভর্তি রয়েছে।

যার মধ্যে ৩২ জনই শিশু। যাদের অধিকাংশই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। নওগাঁর মান্দা থেকে আসা আব্দুর রহমান কন্যা সন্তান নিয়ে রামেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তার ৪২ দিনের শিশুর পাতলা পায়খানা জ্বর। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারে শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে। পারুল আখতার জানান, তার নাতির তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা ও বমি এবং জ্বর রয়েছে। কিন্তু শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নওগাঁর জোতবাজার এলাকার নাজিমুদ্দিন তার তিন বছরের এক শিশুকন্যাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। গত রোববার রাতে জ্বর ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ এনে খাওয়ানো হয়ে তাকে। এরপর সামান্য জ্বর কমলেও কমছিল না পাতলা পায়খানা। এরপর পাতলা পায়খানা কমার পর আবারও জ্বর আসে তার। সঙ্গে আবারও শুরু হয় পাতলা পায়খানা। এভাবে থেমে থেমে চলতে থাকে। নিরুপায় হয়ে অবশেষে রামেক হাসপাতালে ওই শিশুর চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশি বার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি ভুক্তভোগী হয়। তাদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে ট্যাপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের (ইএমও) ইনচার্জ ডা. শংকর বিশ্বাস জানান, এখনো আমাদের হাসপাতালে রোগীর পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গরম এসেছে। এখন গরম যত বাড়ছে, ডায়রিয়া রোগীও তত বাড়ছে। এক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।