চিনির চেয়ে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি ‘স্টেভিয়া’
রাজশাহীতে চাষ করছেন তিন কৃষক
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিজয় ঘোষ, রাজশাহী ব্যুরো
চিনির চেয়ে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি পাতা। আবার একই পাতা শুকিয়ে পাউডার তৈরি করলে মিষ্টতা বেড়ে যায় প্রায় ৫০ গুণ। চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি- এই উদ্ভিদটির নাম স্টেভিয়া। তুলসীর মতো দেখতে স্টেভিয়ার পাতা ‘মধুপাতা’ বা ‘চিনিপাতা’ নামেও পরিচিত। ডায়াবেটিকে আক্রান্ত অনেকেই খেয়ে থাকেন চিনির বিকল্প হিসেবে। বেশি মিষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় স্টেভিয়া সম্ভাবনাময় শস্য হিসেবে দেখছে- বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট। রাজশাহীতে সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি পাতা জাতীয় ভেষজ গাছ ‘স্টেভিয়া’ চাষ শুরু করেছে তিনজন উদ্যোক্তা। চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি পাতা। আবার একই পাতা ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা শুকিয়ে পাউডার তৈরি করলে মিষ্টতা বেড়ে যায় প্রায় ৫০ গুণ। আর ১ কেজি পাতা শুকালে ৩৫০ গ্রাম হয়। চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি- তুলসীর মতো দেখতে এই উদ্ভিদটির নাম স্টেভিয়া। স্টেভিয়াকে অনেকেই প্রাকৃতিক চিনি বলে থাকেন। ডায়াবেটিকে আক্রান্ত অনেকেই খেয়ে থাকেন, চিনির বিকল্প হিসেবে। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০১ সালে থাইল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করে। বর্তমানে রাজশাহীর পবার কাশিয়াডাঙ্গার কৃষক আতাউর রহমান, শিতলাইয়ের মুনতাশির এবং চারঘাটের বালিয়াডাঙ্গার মোহাম্মদ আলী স্টেভিয়ার চাষ শুরু করেছে। সাধারণত কফি বা চায়ের সঙ্গে বেশি মিষ্টি স্টিভিয়া পাউডার ব্যবহার করা যায়। লেবুর শরবত বা অন্য পানীয় প্রস্তুত করতেও চিনির বিকল্প হিসেবে এর জুড়ি নেই। পাতার গুঁড়ো দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবে। এই ঔষধি পাতায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। চাষ শুরুর পর থেকে ৮ মাসের মধ্যে ৪ থেকে ৫ বার এই গাছের পাতা আহরণ করা যায়। স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি সহজ এবং উৎপাদন খরচও কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। রাজশাহী অঞ্চলের জলবায়ু ও মাটি স্টেভিয়া চাষের উপযোগী আর উৎপাদন খরচও কম। ডায়াবেটিক রোগীরা চিনির বিকল্প হিসেবে এই পাতা ব্যবহার করতে পারবে। তাই বাণিজ্যিকভাবে স্টেভিয়া চাষের অনেক সম্ভাবনা দেখছে স্থানীয় চাষিরা। চাষি আতাউর রহমান জানান, আমি একজন আখ চাষি। আখ চাষের সুবাদে ইক্ষুগবেষণা কেন্দ্র আমাকে একটি মিষ্টি জাতীয় পাতা চাষে উদ্বুদ্ধ করে। তার নাম স্টেভিয়া। এটি একটি মিষ্টি জাতীয় পাতা। এটা সকল খাবারে ব্যবহার করা যায়। এটা চাষও খুব সহজ। ২০২৩ সাল থেকে একটি প্রদর্শনী প্লটে ৩০০ চারা দিয়ে চাষ শুরু করেছিলাম। এবং ২০২৪ সালে ৬০০ চারা দিয়ে প্রর্দশনী প্লট শুরু করছি। এবং ব্যাপকভাবে চারা উৎপাদন হচ্ছে। এটা আমি বাণিজ্যিক আকারে চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছি। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহীর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচএম আল-আমিন জানান, স্টেভিয়া বাংলাদেশে মিষ্টি জাতীয় একটি নতুন ফসল যা ডায়াবেটিক্স রোগীদের জন্য আশীর্বাদ। এই ফসলটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো স্টেভিয়ার পাতাটা চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী উপকেন্দ্রে ইস্টেভিয়ার তিনটি প্রর্দশনী প্লট রয়েছে। এই প্লটগুলোতে তিনজন চাষি ছয় শতক জায়গায় ৬০০ চারা লাগিয়ে ফসলটির আবাদ করছে। এবং বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি প্রকল্প থেকে এই প্লটগুলোতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এবং মাঠ দিবস ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে এই ফসলটি সব চাষিদের মাঝে পরিচিত করে দেওয়া হবে।