রাজধানীতে ঈদের আমেজ কাটেনি এখনো
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাধারণত ঈদের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ঢাকা তার চিরচেনা রূপ ফিরে পেলেও লম্বা ছুটির ফাঁদে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এমনকি ঈদের সাত দিন পার হয়ে গেলেও এখনও রাজধানীর সড়কে ঈদের আমেজ। নেই চিরচেনা যানজট বা বাসে যাত্রীদের ওঠার প্রতিযোগিতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক মহাখালী সাতরাস্তা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। এছাড়া গুগল ম্যাপের সড়কে ট্রাফিকের তথ্য বিশ্লেষণ করেও একই ধরনের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের পর প্রথম কয়েক দিন প্রায় সকল প্রধান সড়ক ও গলিগুলো ফাঁকা ছিল। বন্ধ ছিল বেশিরভাগ মুদি দোকান থেকে অলিগলির খাবার দোকানগুলো। সময়ের সাথে সাথে সব খুললেও রাজধানীতে এখনও লোক সমাগম কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে সড়ক, গণপরিবহন সব খানেই মানুষের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সড়কগুলোতে গাড়ি থাকলেও চিরচেনা জ্যাম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়। অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয় ৯ এপ্রিল। কিন্তু শবে কদর, এর আগে সাপ্তাহিক ছুটি ও ঐচ্ছিক ছুটি মিলিয়ে অনেকেই আগেভাগে ঢাকা ছাড়ে। আবার ঈদের ছুটি শেষে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ থাকায় বেশিরভাগ অফিস শুরু হয় ১৫ এপ্রিল। তবে সেখানেও প্রাণ ফেরেনি রাজধানীর। ঢাকার ব্যস্ততম মোড়গুলোর অন্যতম মগবাজার চৌরাস্তা। সারা বছর দিন ও রাতের পুরোটা সময় এখানে গাড়ির দীর্ঘ লাইন থাকে। কখনও গণপরিবহনের সারি পৌঁছায় মগবাজার ও মৌচাকের মাঝামাঝি সিদ্ধেশ্বরী কলেজ পর্যন্ত। তবে ঈদের সাত দিন পরেও সড়কটি অনেকাংশেই ফাঁকা। গণপরিবহনগুলোতেও যাত্রীদের ভিড় কম।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অফিস-আদলত খুললেও যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। বিশেষ করে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। গাজীপুর থেকে সদরঘাটগামী আজমেরি গ্লোরির হেলপার বলেন, ঈদ তো গেছে অনেক দিন হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও রাস্তায় যাত্রী নেই। সাধারণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী থাকলেও এখন সিটই ভরছে না। যাত্রীর এই অবস্থায় গাড়ি বের করলেই লস। জমার টাকা তোলাই কষ্টকর। তাই গাড়িও কম বের করা হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ঝলক বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে মগবাজার-মৌচাকের দিকে চারটি বাস আসে। লাব্বাইক, এমএম লাভলি, আয়াত ও স্বাধীন পরিবহন। অফিস শেষে বাসায় ফেরার সময় কোনো গাড়িতেই সিট তো দূরের কথা ওঠার অবস্থাই থাকে না। ফার্মগেট থেকেই সব যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে আসে। আথচ ঈদের পর সব অফিস খোলার পরেও গত কয়েকদিন একদম সিটে বসে আসতে পারছি। উঠতে বা নামতেও বেগ পেতে হচ্ছে না। লাব্বাইক বাসের এক চালক বলেন, যাত্রী কম। অনেক সময় সিট খালি যাচ্ছে। আজকে সপ্তাহের শেষ দিন। বিকালের দিকে হয়তো কিছুটা যাত্রীর চাপ পাব। মানুষ এখনো সব আসেনি।
আবার গরম বেশি থাকায় অতি প্রয়োজন ছাড়া হয়তো লোকজন কম বের হচ্ছে। গুগল ম্যাপের ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যবেক্ষণ করেও একই চিত্র দেখা যায়। বাংলামোটর, আসাদগেট, বিজয় সরণির মতো ব্যস্ত স্থানগুলোতেও নেই চিরচেনা যানজট। অনেকটাই স্বস্তির সাথে জ্যামের জন্য কুখ্যাত মোড়গুলো পার হচ্ছে গণপরিবহনগুলো
ঈদের তৃতীয় দিন থেকেই মোটামোটি অলিগলির সকল খাবার দোকানগুলো চালু হয়ে গেছে। গলিতে মানুষের উপস্থিতি কম। এ অবস্থায় কেমন চলছে হোটেল ব্যবসা, জানতে কথা হয় একাধিক হোটেলের কাউন্টারে দায়িত্বরতদের সাথে। তারা বলেছেন, স্বাভাবিকের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি কম। তবে হোটেলে কাস্টমার আছে। আমরা সকালের সিঙ্গারা-সমুচা কম বানাচ্ছি। তবে দুপুরে খাবারের চাহিদা আছে। আমাদের বেশিরভাগ কাস্টমার নিম্ন আয়ের কর্মজীবীরা। তবে এর সাথে এখন ব্যাচেলর মেসে থাকা লোকজন যুক্ত হয়েছে।
তেমনই একজন বাটার গলির মেসের বাসিন্দা ফয়সাল। তিনি বলেন, আমাদের ছুটি শেষ হয়েছে ১৪ তারিখ। ১৫ তারিখের মধ্যেই প্রায় সবাই চলে আসছি। তবে এখনও খালা (রান্নার বুয়া) আসেনি। আমরা ৯ তারিখ ঢাকা ছাড়লেও তিনি গেছেন ৭ তারিখ। আমরা সবাই চলে আসলেও তিনি আসেননি। কবে আসবেন তাও জানি না। ফলে তিন বেলাই হোটেলে খেতে হচ্ছে।